
আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হচ্ছে ত্বক, যা সূর্যালোক, তাপ, ঠান্ডা, আঘাত এবং সংক্রমণ থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়। এই ত্বক প্রধানত দুটি স্তর নিয়ে গঠিত এপিডার্মিস ও ডার্মিস। এপিডার্মিসে থাকে স্কোয়ামাস সেল, বেসাল সেল এবং মেলানোসাইট নামের তিনটি প্রধান সেল, যেগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটলেই জন্ম নেয় ত্বক ক্যান্সার।
ত্বক ক্যান্সার যদিও পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিছু সচেতনতা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অতিরিক্ত অতিবেগুনি (UV) রশ্মির সংস্পর্শে আসা হোক সেটা সরাসরি সূর্যের আলো কিংবা সোলার বা ট্যানিং বেডের মাধ্যমে। এছাড়াও কিছু ক্যান্সারসৃষ্টিকারী রাসায়নিকের সংস্পর্শেও এই রোগ হতে পারে।
ত্বক ক্যান্সারের ধরন
ত্বক ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, নির্ভর করে কোন ধরনের কোষ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর।
বেসাল সেল কারসিনোমা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এটি ধীরে বাড়ে।
স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা সাধারণত লালচে, খসখসে ক্ষতের মতো দেখা দেয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী না হলেও অবহেলা করলে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
মেলানোমা সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরনের ত্বক ক্যান্সার, যা ত্বকের রঙ উৎপাদনকারী মেলানোসাইট কোষে হয় এবং এটি শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ঝুঁকি কমাতে যা করবেন
ত্বক ক্যান্সারের কিছু কারণ বংশগত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সচেতন থাকলেই ঝুঁকি অনেকাংশে এড়ানো যায়।
ত্বক পরীক্ষা করান নিয়মিত
ত্বকে কোনো সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে ত্বক পরীক্ষা করান। শরীরের এমন সব জায়গা রয়েছে যেগুলো আপনি নিজের চোখে দেখতে পারেন না, কিন্তু সেখানে সমস্যার শুরু হতে পারে। ত্বকের তিল বা কোনো নতুন গঠন অস্বাভাবিক মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
রোদে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করুন। SPF ৫০ বা ততোধিক মানের সানস্ক্রিন বেছে নিন, বিশেষ করে যদি আপনি সহজেই রোদে পোড়ে যান। UVA ও UVB উভয় রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় এমন ‘ব্রড-স্পেকট্রাম’ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন আবার লাগাতে ভুলবেন না, বিশেষ করে ঘামলে বা পানিতে ভিজলে।
সূর্য থেকে নিজেকে আড়াল করুন
সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব মাত্র ১৫ মিনিটেই ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে সরাসরি রোদে না গিয়ে ছায়া খুঁজে নিন। রোদে বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন যা UVA ও UVB রশ্মি থেকে চোখ এবং চোখের চারপাশের ত্বক রক্ষা করতে পারে। হালকা ও ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরুন এবং চওড়া ব্রিমযুক্ত টুপি ব্যবহার করুন, যাতে মুখ ও ঘাড় রক্ষা পায়।
ট্যানিং বেড এড়িয়ে চলুন
ট্যানিং বেড বা কৃত্রিম রোদে পোড়ানো পদ্ধতিও ত্বকের জন্য সমান ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছরের নিচে কেউ ট্যানিং বেড ব্যবহার করলে মেলানোমার ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই সূর্য এড়িয়ে কৃত্রিম UV আলো গ্রহণ করাও নিরাপদ নয়।
ভিটামিন ও প্রসাধনী পণ্য কি সাহায্য করতে পারে?
রেটিন-এ (Retin-A)
ত্বকের পুনর্জন্মে সহায়ক হলেও, রেটিনল জাতীয় পণ্য ত্বককে সূর্যের প্রতি অতিসংবেদনশীল করে তোলে। ফলে ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত সাবধানতা দরকার এবং অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
ভিটামিন বি-৩ (নিয়াসিনামাইড)
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়াসিনামাইড ত্বকের প্রদাহ কমাতে, ত্বকের প্রোটিন গঠন ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক, যা সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
ত্বকে নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
অস্বাভাবিক সীমার তিল
হঠাৎ করে বেড়ে ওঠা ত্বকের গঠন
লালচে খসখসে দাগ যা যাচ্ছে না
ব্যথা, চুলকানি বা জ্বালা
রক্তপাত বা ঘা থেকে রস বের হওয়া
ত্বক ক্যান্সার যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রচলিত ক্যান্সার হলেও সচেতনতা এবং নিয়মিত যত্নে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সানস্ক্রিন ব্যবহার, রোদ এড়িয়ে চলা, ট্যানিং বেড থেকে বিরত থাকা এবং বছরে অন্তত একবার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। নিয়মিত ত্বকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন এবং অস্বাভাবিকতা দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সতর্কতাই সুরক্ষার চাবিকাঠি।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdfv3mt9
আফরোজা