
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই মনে করেন, ফল খাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? ফলের মধ্যে তো চিনি থাকে! কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। ফল হলো প্রকৃতির দেওয়া অন্যতম পুষ্টিকর উপাদান, যা ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারে ভরপুর। আর এই ফাইবারই কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন। এমন প্রেক্ষাপটে পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি মাত্র ফল—আপেল—অন্তর্ভুক্ত করলেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কেন আপেল?
১. দ্রবণীয় ফাইবারে সমৃদ্ধ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপেলে থাকা পেকটিন নামের একটি দ্রবণীয় ফাইবার হজমতন্ত্রে কোলেস্টেরল এবং পিত্ত অ্যাসিডের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে সেগুলোর শোষণ প্রতিরোধ করে এবং শরীর থেকে তা নির্গত হতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি আপেলে প্রায় ৪ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ১৫ শতাংশ পূরণ করে।
২. পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
আপেলে থাকা পেকটিন প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এই ফাইবারগুলো অন্ত্রে গিয়ে গাঁজন হয়ে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে, যা লিভারে কোলেস্টেরল তৈরির প্রক্রিয়া কমিয়ে দেয়।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
আপেল পলিফেনল নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমা প্রতিরোধ করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৪. ফাইটোস্টেরল থাকে:
আপেলে ফাইটোস্টেরল নামক উদ্ভিজ্জ যৌগ থাকে, যা শরীরে কোলেস্টেরল শোষণ কমায়। ফলে রক্তে মোট ও এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু কার্যকর কৌশল:
১. ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান:
সবজি, ফল, বাদাম, ডাল ও শস্যজাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে। এগুলো এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে শরীরে এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়ে এবং এলডিএল কমে।
৩. চর্বির ধরন বদলান:
পরিশোধিত স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাদ দিয়ে অলিভ অয়েল, বাদাম ও মাছের মতো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করুন।
৪. মানসিক চাপ কমান:
মানসিক চাপ কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়াতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম মানসিক চাপ হ্রাসে কার্যকর।
আপেল হলো এমন একটি ফল, যা কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। দ্রবণীয় ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক যৌগের উপস্থিতির কারণে এটি শুধু হৃদ্রোগ প্রতিরোধেই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেহের উপকারে আসে। তাই প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার অভ্যাসে ডাক্তার নয়, কার্ডিওলজিস্টের কাছেও কম যেতে হতে পারে—বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: https://www.eatingwell.com/the-1-fruit-to-eat-to-help-lower-your-cholesterol-11772297
রাকিব