
ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাটি লিভার রোগ বা হেপাটিক স্টিয়াটোসিস একটি চুপচাপ ছড়িয়ে পড়া মহামারি, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। এটি লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে হয় এবং কখনো মৃদু হলেও কখনো তা নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস (NASH)-এ পরিণত হতে পারে, যা লিভারের প্রদাহ, ক্ষতি এবং সিরোসিস পর্যন্ত নিয়ে যায়। যদিও এই রোগের ভয়াবহ পরিসংখ্যান মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, তবুও একটি আশার রশ্মি আছে যা অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে, সেটা হলো নিয়মিত ব্যায়ামের ইতিবাচক প্রভাব।
বছর ধরেই ডায়েটারি পরিবর্তন ফ্যাটি লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু শুধুমাত্র নিয়মিত হাঁটা-দৌড়ানো বা ব্যায়াম করলেই কি সত্যিই এই রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব? ভারতের শারদা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. শ্রেয় কুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘অবশ্যই সম্ভব।’ চলুন জানি কীভাবে নিয়মিত ব্যায়াম ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় সাহায্য করে।
কীভাবে ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমায়?
ডা. শ্রীবাস্তব বলেন, ‘লিভার মেটাবলিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং যখন এটি চর্বিতে ভর্তি হয়, তখন তার কাজ কমে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ফ্যাটি লিভারের সৃষ্টি এবং প্রগতির প্রধান যন্ত্রণাগুলোকে টার্গেট করে।’ এর মধ্যে মূল বিষয়গুলো হলো:
১. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে শরীরের কোষ ইনসুলিনের সঠিক সাড়া দেয় না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে এবং লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে। ব্যায়াম বিশেষ করে অ্যারোবিক এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা অনেক বাড়ায়। ফলে শরীর গ্লুকোজ শক্তি হিসেবে ভালো ব্যবহার করতে পারে, এবং লিভারের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ কমে।
২. লিভারের চর্বি কমানো
ব্যায়ামের সময় শরীর জমিয়ে রাখা চর্বি ব্যবহার করে, যার মধ্যে লিভারের চর্বিও অন্তর্ভুক্ত। নিয়মিত ব্যায়াম ফ্যাটি অ্যাসিডের অক্সিডেশন বাড়িয়ে hepatic কোষে চর্বির পরিমাণ কমায়।
৩. অর্গানের আশপাশের চর্বি হ্রাস
ভিসেরাল ফ্যাট বা অর্গানের আশপাশে জমে থাকা বিপজ্জনক চর্বি ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ব্যায়াম এই চর্বি কমাতে কার্যকরী, যা লিভারের ওপর চাপ কমিয়ে দেয় এবং এর কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
৪. লিভারের এনজাইম স্তর উন্নয়ন
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্যায়ামকারীদের লিভারের ক্ষতিকর এনজাইম (যেমন ALT, AST) কম থাকে, যা লিভারের প্রদাহ ও ক্ষতির সংকেত দেয়। অর্থাৎ ব্যায়াম লিভার কোষের সরাসরি সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৫. প্রদাহ মোকাবেলা
ফ্যাটি লিভারের উন্নত অবস্থায় ক্রনিক প্রদাহ থাকে। ব্যায়ামের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব লিভারে সৃষ্ট প্রদাহ কমায় এবং কলাজেন জমা হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ
যদিও একমাত্র কারণ নয়, নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমায় এবং ওজন কমানোর ফলে লিভারের চর্বি উল্লেখযোগ্য হারে কমে।
কোন ধরনের ব্যায়াম সর্বোত্তম?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওলিম্পিক অ্যাথলেট হওয়া প্রয়োজন নেই। একটি ব্যালেন্সড প্ল্যান যথেষ্ট কার্যকর। যেমন—
১. অ্যারোবিক ব্যায়াম
দ্রুত হাঁটা, দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতার বা নাচ সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট (প্রতি দিন ৩০ মিনিট, সপ্তাহে ৫ দিন)। এতে লিভারের চর্বি কমে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
২. রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং
সপ্তাহে ২-৩ দিন ওজন তোলা, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার বা শরীরের ওজন দিয়ে স্কোয়াট, লঞ্জ, পুশ-আপ করা মাংসপেশি গঠন ও মেটাবলিজম বাড়ায়, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।
ব্যায়াম শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতাই নয়; এটি ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার একটি কার্যকর, ওষুধবিহীন থেরাপি। ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, চর্বি কমানো, প্রদাহ হ্রাস এবং মেটাবলিজম উন্নত করার মাধ্যমে এটি লিভারকে পুনরুজ্জীবিত করার অসাধারণ সুযোগ দেয়। তাই আজই শুরু করুন নিয়মিত ব্যায়াম, এবং আপনার লিভারকে স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী করে তুলুন।
সূত্র: https://www.onlymyhealth.com/can-exercising-regularly-reverse-fatty-liver-expert-tells-12977833990
রাকিব