
শরীর সুস্থ রাখতে পানি পান কতটা জরুরি, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে কখন পানি খাবেন, কতটুকু খাবেন,এ নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে অনেকের মাঝে। চিকিৎসকরা বলছেন, অজ্ঞানভাবে পানি পান না করে শরীরের চাহিদা বুঝে সঠিক সময় ও সঠিক পদ্ধতিতে পানি পান করাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের চাবিকাঠি।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, শরীরের কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে পানির সঠিক মাত্রা অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত পানি পানও হতে পারে বিপজ্জনক।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি কেন জরুরি?
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ ঘুমের পর দেহ পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। এমন সময় খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করলে তা অন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সাহায্য করে এবং টক্সিন অপসারণে সহায়তা করে। অনেকে এতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করেন, যা লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে উপকারী হতে পারে।
খাবারের সঙ্গে পানি খাওয়া কি ঠিক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি খেলে পাকস্থলীতে হজম এনজাইমের ঘনত্ব কমে যায়, ফলে হজমে সমস্যা হয়। তাই খাবারের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে বা পরে পানি পান করাই স্বাস্থ্যসম্মত। খাবারের সময় অল্প পরিমাণে চুমুক দিয়ে পানি পান করা যেতে পারে।
রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া কতটা ঠিক?
রাতে অতিরিক্ত পানি পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তবে একেবারে পানি না খাওয়াও ঠিক নয়। চিকিৎসকরা বলেন, ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে অল্প পরিমাণে পানি খেলে দেহ হাইড্রেটেড থাকে, কিন্তু ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে না।
প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক পানি চাহিদা গড়ে ৩.৭ লিটার এবং নারীদের ক্ষেত্রে প্রায় ২.৭ লিটার। তবে এই হিসাবের মধ্যে ফলমূল, শাকসবজি এবং অন্যান্য পানীয় থেকে প্রাপ্ত তরলও অন্তর্ভুক্ত থাকে। শরীরচর্চা, আবহাওয়া, ওজন ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে এ পরিমাণে ভিন্নতা হতে পারে।
অতিরিক্ত পানি পান করলে কী হতে পারে?
যতটা পানি কম খেলে সমস্যা, অতিরিক্ত খেলেও ততটাই ঝুঁকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’ বা ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’। এ অবস্থায় শরীরের সোডিয়াম ঘনত্ব হঠাৎ কমে যায়, ফলে মাথা ঘোরা, বমি, দুর্বলতা এমনকি চেতনা হারানোও ঘটতে পারে। মারাত্মক ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানির ঘাটতি বা অতিরিক্ততা,দুই-ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, বিশেষ করে রোদে বা গরমে থাকেন, তাদের শরীরের ঘাম ও লবণাক্ততা বিবেচনায় রেখে পানি পান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের স্বাভাবিক ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বিঘ্নিত না হয়।”
পানি জীবন, তবে সেই জীবন ধরে রাখতে হলে পানি পানের ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। তৃষ্ণা পেলে বা শরীরের প্রয়োজনে ধীরে ধীরে পানি পান করা উচিত। একইসঙ্গে খেয়াল রাখা জরুরি,পানির অতিরিক্ত গ্রহণ যেন স্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে না ফেলে। সচেতন, নিয়মিত ও পরিমিত পানি পানই পারে আপনাকে রাখতে সতেজ ও রোগমুক্ত।
সূত্র:https://tinyurl.com/4a7wcfsy
আফরোজা