ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

স্পর্শের অনুভূতি

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

স্পর্শের অনুভূতি

আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্মে যেমন একটা গ্লাস তুলে নেয়া বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মতো ঘটনায় হাল্কা স্পর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই অনুভব বা সংবেদন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশও বটে। স্পর্শানুভূতি আমাদের পরিবেশ পরিপার্শ্বের সেই সব বস্তু সম্পর্কে সতর্ক করে দেয় যেগুলোর কারণে আমরা পড়ে যেতে বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারি। তা ছাড়া এই স্পর্শানভূতি বিপদ নির্ণয় ব্যবস্থারও অংশ যে ব্যবস্থা কীটপতঙ্গের কামড় থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এমন সব কীটপতঙ্গ আছে যা রোগব্যাধির কারণ ঘটায়। যেমন মশার কারণে ম্যালেরিয়া ও এটুলি পোকার কামড়ে লাইম রোগ হয়। এই জাতীয় কীঠপতঙ্গ আমাদের গাত্রচর্মের ওপর বসলে ত্বকে চুলকানির অনুভূতি হয়। তা থেকেই আমরা সতর্ক হতে পারি। আমাদের সুষস্লাকাণ্ডের বা স্পাইনাল কর্ডের নিউরনগুলো কিভাবে এ ধরনের চুলকানির সঙ্কেতসমূহের মস্তিষ্কে পরিবাহিত করার কাজে সাহায্য করে গবেষকরা তা আবিষ্কার করেছেন। গত ১৬ জুলাই ‘সেল রিপোর্টস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যাবলী চুলকানির ব্যাপারটি আরও ভালভাবে অনুধাবনে সহায়ক হবে এবং একজিমা, ডায়াবেটিস এমনকি কিছু কিছু ক্যান্সারের মতো অবস্থায়ও চুলকানির চিকিৎসায় নতুন ওষুধ উদ্ভাবিত হতে পারে। নিউইয়র্কের অধ্যাপক মাইকেল গোল্ডিং বলেন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলটি হলো এই যে চুলকানির এই যান্ত্রিক অনুভূতিটা অন্যান্য ধরনের স্পর্শানুভূতি থেকে আলাদা এবং সুষস্লাকাণ্ডের অভ্যন্তরে এর একটি সুনির্দিষ্ট গমন পথ আছে। গোল্ডিং ও তার সহকর্র্র্মীরা এর আগে সুষস্লাকাণ্ডের ভেতর এক সেট অবদমনকারী নিউরন আবিষ্কার করেছিলেন যেগুলো সেলুলার ব্রেক হিসেবে কাজ করে সুষস্লাকাণ্ডের চুলকানির যান্ত্রিক গমন পথকে বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখে। এই নিউরনগুলো নিউরোট্রান্সমিটার নিউরোপেপটাইড (এনপিওয়াই) উৎপাদন করে। ওই নিউরনগুলো না থাকলে চুলকানির সঙ্কেতের যান্ত্রিক গমন পথ সর্বক্ষণ চালু থাকে এবং তার ফলে সর্বক্ষণ চুলকানি হয়। গবেষকরা যা জানতেন না তা হলো চুলকানির সঙ্কেত, যা স্বাভাবিক অবস্থায় এনপিওয়াই নিউরনের দ্বারা অবদমিত থাকে, চুলকানির অনুভূতি জানানোর জন্য মস্তিষ্কে পরিবাহিত হয়। ডেভিড এ্যাকটন নামে আরেক গবেষক বলেন চুলকানির অনুভূতি অবদমনকারী এনপিওয়াই নিউরন না থাকলে সুষস্লাকাণ্ডের যে নিউরনগুলো সাধারণত হাল্কা স্পর্শের অনুভূতি পরিবাহিত করে সেগুলো চালু অবস্থায় থাকা এক্সিলারেটরের মতো করতে শুরু করে। এ্যাকটন এরপর সুষস্লাকাণ্ডের উদ্দীপক নিউরনগুলোর মধ্য থেকে হাল্কা স্পর্শের অনুভূতি বহনকারী নিউরন চিহ্নিত করেন যার নাম ওয়াই আই স্পাইনাল নিউরন। এই নিউরনগুলো বাস্তবিকই এক্সিলারেটরের মতো কাজ করে কিনা দেখার জন্য এ্যাকটন ইঁদুরের ওপর একটা পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় এনপিওয়াই ‘ব্রেক’ এবং ওয়াই আই ‘এক্সিলারেটর’ এই উভয় নিউরনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। দেখা যায় যে ওয়াই আই নিউরন সক্রিয় না থাকায় ইদুঁরগুলো তাদের শরীরে আঁচড়ায়নি। এমনকি হুল্কা স্পর্শের অনুভূতি উদ্দীপকের কারণে সাধারণত ওরা শরীরে আঁচড়ালেও এ ক্ষেত্রে সেটাও করেনি। এরপর এ্যাকটন ইদুঁরগুলোকে ওয়াই আই নিউরন সক্রিয় করে তোলা ওষুধ দিয়ে দেখেন যে ইঁদুরগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শরীরে আঁচড়িয়েছে এমনকি হাল্কা স্পর্শের অনুভূতি উদ্দীপক না থাকলেও তা করেছে। গোল্ডিংয়ের গবেষক দলটি এরপর দেখতে সক্ষম হন যে এনপিওয়াই নিউরোট্রান্সমিটার ওয়াই আই নিউরনের উদ্দীপ্ত হওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য কথায় এনপিওয়াইয়ের সঙ্কেত আমাদের হাল্কা স্পর্শের সংবেদনশীলতা বা স্পর্শকাতরতা নিয়ন্ত্রণে এক ধরনের থার্মোস্ট্যাট হিেেব কাজ করে। অন্যান্য ল্যাবের তথ্য উপাত্তেও দেখা গেছে সোরিয়াসিস আছে এমন কিছু কিছু মানুষের এনপিওয়াইয়ের মাত্রা এর গড় মাত্রার চেয়েও কম। তার মানে চুলকানির অনুভূতির ক্ষেত্রে তাদের ব্রেকগুলোর কার্যকারিতা অন্যান্য মানুষের চেয়ে কম এবং এটাই হলো তাদের চুলকানির সম্ভাব্য কারণ। ওয়াই আই নিউরন চুলকানির অনুভূতি স্পাইনাল কার্ডে বহন করে নিয়ে যায় ঠিকই, তবে মস্তিষ্কে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে অন্যান্য নিউরনেরও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। অবশ্য এব্যাপারে আরও গবেষণা চালানোর প্রয়োজন আছে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×