আবদুন নূর সজল
জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুন নূর সজল। টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা তিন মাধ্যমেই নিয়মিত কাজ করছেন। গেল ঈদেই প্রশংসিত হয় তার অভিনীত ‘আদব বেয়াদব’ নাটকটি। এতে তার সঙ্গে দেখা যায় বড়পর্দার অভিনেত্রী পূর্ণিমাকে। এটি পরিচালনা করেন মাবরুরর রশিদ বান্না। যেখানে অন্যরা ভিউর প্রতিযোগিতায় সেখানে বরাবরই সজল ভিন্ন পথে। বেছে বেছে কাজ করছেন তিনি। ভিউ নয়, গল্পকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি।
অভিনেতা জানান, প্রতিটি গল্পেই তার একটি বার্তা থাকছে। কারণ দর্শক বরাবরই সুন্দর একটি গল্প দেখতেই পছন্দ করেন। দীর্ঘ সময়েও নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন দু’পর্দার এ নায়ক। ব্যস্ত সময় পার করছেন শূটিংয়ে। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের দুই দশকের বেশি সময় অতিক্রম করছেন তিনি। শোবিজে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করেন এ লাভার বয়। প্রথম বিলবোর্ডের মডেল ও একুশে টিভির একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সবার সামনে আসেন। এরপর ২০০৪ সালে তন্ময় তানসেনের ‘প্রেমা’ নাটকে অভিনয় করেন।
দুই বছরের বিরতি দিয়ে আফজাল হোসেন পরিচালিত ‘হিরা ফুল ছিল’ নাটক দিয়ে অভিনয়ের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেন তিনি। তারপর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। কেমন ছিল শুরু থেকে আজকের এই লম্বা জার্নি? সজলের ভাষ্য, ‘কোন জার্নিই সহজ নয়। কখনও ভালও সময় কখনও খারাপ সময় পার করতে হয়। আমিও সেই সময় পার করেছি। এখনও সামনে অনেক লম্বা সময় সেটি মনে রেখেই পথ চলছি। আমার এ লম্বা সময়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বরাবরই ভাল সহযোগিতা পেয়েছি। তবে তিক্ত অভিজ্ঞতাও কম নয়। দর্শক আমাদের পর্দায় অনেক রোমান্টিক দেখেন।
অথচ এমন দৃশ্যে অভিনয় করার সময়ও ভেতরে আমাদের অনেক না বলা কষ্ট থাকে। ২০১১ সালের দিকে একবার আমি একটি কমিউনিটি সেন্টারে শূটিং করছি। সেখানে বিয়ের একটি দৃশ্য ছিল। আমাকে পুরো রোমান্টিক মুডে থাকতে হবে ক্যামেরায়। অথচ ঠিক সে সময়ে আমি খবর পাই আমার দাদি মারা গেছেন। পরিস্থিতি এমন হলো আমি এটি পরিচালককে জানালে তিনি হয়তো শুটিং বন্ধ করবেন। কিন্ত অনেক টাকার ক্ষতির মুখেও পড়তেন। আমি সেটি না করে পরিচালককে শুধু বলেছি যত দ্রুত সম্ভব আমার কাজটি শেষ করার জন্য। তারপর সেটি শেষ করে বাসায় ফিরি। এমন অনেক ঘটনা আছে।’ দুই দশকের বেশি অভিনয় জীবনে এ অভিনেতা হাতেগোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
বর্তমানে তার হাতে ‘সুবর্ণভূমি’ শিরোনামের একটি সিনেমা আছে। এতে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ঈদের পর পরেই এটির ডাবিং শেষ করেন তিনি। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক জাহিদ হোসেন। পরিচালক জানান, আগামী ডিসেম্বরে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে চান তিনি। সজলও জানালেন, বিজয়ের মাসে ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত। এটি ছাড়াও অভিনেতার হাতে আরও আছে আবু সাইয়ীদের ‘সংযোগ’ ও হৃদি হকের পরিচালনায় ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ছবিটি। টেলিভিশনের অনেক শিল্পী বড়পর্দায় এসে খুব ভাল জায়গায় যেতে পারেনি বলে অনেকের মন্তব্য।
সজল কি মনে করেন? তিনি বলেন, আমি এর সঙ্গে এক মত নই। এছাড়া এ সময়ে এসে এটি পুরোপুরি ঠিক না বলেই মনে মনে করি। টিভি অভিনেতাদের অনেকেই এখন সিনেমায় নিয়মিত কাজ করছেন। একটা সময় সেটির সুযোগ ছিল না। কারণ এখন সিনেমার পরিবেশটাই বদলে গেছে। কে ছোটপর্দার কে বড়পর্দার সেটি নির্ভর করছে না। গল্পে যাকে যাচ্ছে নির্মাতা তাকে নিয়েই কাজ করছেন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে আমাদের ছোটপর্দার শিল্পীরা বড়পর্দায় এখন কতটা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর একটা বিষয় যার যোগ্যতা আছে সে টিকে থাকেবেই।
নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে তৈরি করে চলেছেন ‘হিরাফুল’খ্যাত অভিনেতা। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে ভাঙা আর গড়ার মধ্যেই আছেন। এটা অবশ্য নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে তুলে ধরার জন্যই করা। সেটি প্রমাণ করেছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমেও। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে তার অভিনীত ‘ব্যাচ-২০০৩’ ওয়েব ফিল্মটিতে ফের প্রমাণ করলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। এটি দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে। খুব শিগগিরই তাকে দেখা যাবে ‘পাফ ড্যাডি’ শিরোনামের একটি ওয়েব সিরিজে। এতে তার বিপরীতে থাকছেন পরীমণি।