ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবির ফ্রেমে ফিরে দেখা জুলাই অভ্যুত্থান

সানজিদা জান্নাত পিংকি

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৯ জুলাই ২০২৫

ছবির ফ্রেমে ফিরে দেখা জুলাই অভ্যুত্থান

ফিরে দেখা জুলাই অভ্যুত্থান

এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে, চারদিক ঝাপসা হয়ে আসা আলো-আঁধারির মধ্যে হঠাৎ করেই স্পষ্ট হয়ে উঠলো কিছু মুখ, কিছু চোখ, কিছু দৃশ্য। আকাশে ঘন মেঘ, থেমে থেমে বৃষ্টি ঠিক যেমন ছিল সেই উত্তাল দিনের আবহ। তবে এই বারিধারাও থামাতে পারেনি স্মৃতির প্রবাহকে। সারাদিনের এই বৃষ্টি ধারাতেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ব্যাডমিন্টন কোর্টে আয়োজিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘ফিরে দেখা উত্তাল জুলাই’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতেই যেন সন্ধান করা হলো সেই সময়ের, সেই মুখগুলোর যারা সেদিন কাঁধে নিয়ে ছিল এক নতুন দিনের স্বপ্ন। আলোকচিত্রের মাধ্যমে ফিরে দেখা হলো সেই আন্দোলনের, যা একটি প্রজন্মকে এক করেছিল। 
প্রদর্শনীর আয়োজক গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। উদ্দেশ্য একটাই জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তিম স্মৃতি প্রজ্জ্বলিত করা।
দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী। বৃষ্টি সত্ত্বেও আমেজ ছিল বেশ। কেউ ছাতা মাথায়, কেউবা কাঁধ ভিজিয়ে দাঁড়িয়েছেন ছবির সামনে। ছবি ঘিরে তৈরি হয় আলোচনার আবহ, স্মৃতিচারণ, সংলাপ আর ভাবনার মুহূর্ত।
কোনো ছবিতে শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড, কেউ জড়ো হয়ে অবস্থান করছেন একাত্মতায়, আবার কোথাও ছুটছে তারা ভয়ডরহীন, দাবির পক্ষে নির্ভীক কণ্ঠে মুখর। আর এসব ছবির পেছনে আছে একেকটি গল্প কখনো সাহসের, কখনো হতাশার, আবার কখনো সেই রক্তাক্ত আত্মত্যাগের যেখান থেকে গড়ে উঠেছে নতুন এক প্রজন্মের চেতনা। প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে দেখতে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মেরাজ হোসেন বলছিলেন, “গবিতে ‘ফিরে দেখা উত্তাল জুলাই’ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় এই আন্দোলনের ভেতরে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভূমিকা।

যারা কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়াই নেমেছিল রাস্তায় এক নতুন দিনের আকাঙ্ক্ষায়। তবে আশঙ্কা থেকে যায়, এই ঐতিহাসিক মনোবল যেন কোনোদিন চেতনাবাজদের খেলনার পুতুল না হয়ে যায়।” ‘ফিরে দেখা উত্তাল জুলাই’ শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি এক ধরণের প্রতিরোধচর্চা। এই আয়োজনে ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কীভাবে কোনো ব্যানার ছাড়াই একদল শিক্ষার্থী নেমেছিল রাস্তায়, কেবল নিজেদের অধিকারের জন্য।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা পর্বের চিত্র ছবির ফ্রেমে আছে ব্যানার হাতে অবস্থান কর্মসূচি, আছে পুলিশের বাধার মুখে দাঁড়িয়ে সাহসী চোখের চাহনি, আছে একাত্মতা প্রকাশে শিক্ষার্থীদের মুখরতা।
অনেকের চোখে স্মৃতির ঝাপটা, অনেকেই দাঁড়িয়ে ছবির সামনে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকেন। কেউ হয়তো চিনে ফেলছেন নিজেকে কোনো ছবিতে, কেউ আবার সেই সময়ের একজন নীরব প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আজ যেন তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলো শব্দ খুঁজে পেয়েছে।
আয়োজকরা জানান, “আমরা চাইনি শুধু ছবি দেখাতে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, এই ছবিগুলোর ভেতর দিয়ে শিক্ষার্থীদের ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো। এই আন্দোলন ছিল দল-মতের বাইরে দাঁড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিবাদ। তাই এই ছবি শুধু আন্দোলন নয়, চেতনার দলিল। সেই অধ্যায় নতুন প্রজন্ম জানুক, সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা।”
প্রদর্শনীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের আলাদা আবহ বিরাজ করছিল। একদিকে বৃষ্টির শব্দ, অন্যদিকে ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের গুঞ্জন, আলোচনা আর স্মৃতিচারণ। কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউ আবার ক্যামেরার ফ্রেমে ফ্রেমে ফিরে যাচ্ছেন কয়েক মাস আগের সেই উত্তাল দিনে। ‘ফিরে দেখা উত্তাল জুলাই’ যেন এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে সেই সময়ের, যখন নির্ভীক কিছু শিক্ষার্থী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায্যতা ও সমতা ফেরানোর জন্য রাস্তায় নেমেছিল।

এই ছবিগুলো তাদেরই গল্প বলে। বলে কীভাবে সাহসিকতা গড়ে তোলে ইতিহাস। প্রদর্শনী শেষ হলেও ছবিগুলোর প্রভাব থেকে যায় চোখে-মনে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ছবি তুলেছেন, অনেকেই ক্যাপশন পড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন কিছুক্ষণ। যেন কোনো শব্দে নয়, চুপচাপ ছবির ভাষায় বুঝে নিচ্ছেন ইতিহাস। যে ইতিহাসের স্রোত বয়ে যাবে অনন্তকাল।

প্যানেল হু

×