
ছবি: জনকণ্ঠ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে ‘সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সিনিয়র সাংবাদিক এবং গবেষক সরদার আবদুর রহমান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক বিস্তীর্ণ ভূমিকে কেবলই নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমাহার কিংবা পর্যটন স্পট হিংসেবে বিবেচনা করা মস্তবড় অবিবেচকের কাজ হবে। একে একাধারে জাতীয় নিরাপত্তার লৌহ প্রাচীর হিসেবে দেখতে হবে এবং একই সঙ্গে বহু মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের আধার হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এর চারপাশের বিচিত্র সীমানা এবং পরদেশের ভূমির সংযুক্তি পার্বত্য এলাকাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।’
সেমিনারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাহলে শুধু এই অঞ্চলটি নিয়ে সেমিনার হচ্ছে কেন? কারণ এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে, সম্পৃক্ত হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কী নেই? সেখানে জনশান্তি নেই। অপরাধ, খুন, ডাকাতির মতো নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। যুগ যুগ ধরে এর সৌন্দর্য ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নজর রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা পাহাড়ে বাস করে, তাদেরকে পাহাড়ি বলে ছোট করা হচ্ছে, হেয় করা হচ্ছে। কিন্তু আমরাও সমতলে বাস করি, তাহলে কি আমরা সমতলী? মনে রাখতে হবে একটি বিষয়ে আমরা সবাই এক ও অভিন্ন। সেটি হলো আমাদের ভূমি, আমাদের মাতৃভূমি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অধিকারী। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এই অংশটি যেন দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায় এবং আমরা যেন এর প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি।’
আরেক আলোচক আব্দুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ধরনের সভা আমরা আগে আয়োজন করতে পারিনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের এ ধরনের উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। আমাদের দেশে প্রায় ৪৫টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। আমি তাদের নিয়ে কাজ করার সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি এবং অনেক কিছু নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামেই অন্তত ১৪টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। দুর্ভাগ্যবশত গত দশকগুলোতে এই অঞ্চলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এখন সময় এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার।’
প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘মানুষের জীবনের জন্য তার সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন সংস্কৃতিতে আঘাত আসে, তখন তা জীবনকেও প্রভাবিত করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইস্যুর সাথে এই সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আজকের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে একটি বিষয় বলতেই হয়, আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শ'খানেক পাহাড়ি শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু আজকের সভায় কয়জন উপস্থিত আছে? ১০ জন, ২০ জন, এমনকি ৫০ জনও তো নেই। এই আয়োজনটা মূলত কাদের জন্য? প্রয়োজন ছিলো তাদেরও এখানে সম্পৃক্ত হওয়া।
সেমিনারটিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তারেক ফজল। কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুরশিদা ফেরদৌস প্রমুখ।
আবির