ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ক্যাম্পাস তারুণ্য

সংগ্রাম আর সমাজসেবায় স্বপ্নবাজ এক তরুণ

আশিকুর রহমান

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৯ জুলাই ২০২৫

সংগ্রাম আর সমাজসেবায় স্বপ্নবাজ এক তরুণ

মাইনুল ইসলাম একজন স্বপ্নবাজ

পাহাড়-নদী-বাঁশঝাড়ে ঘেরা লক্ষ্মীপুরের একটি গ্রাম। শহরের আলোছায়া, সুযোগ-সুবিধা, এমনকি ইন্টারনেট সুবিধাও ছিল সীমিত। সেই পরিবেশেই বড় হয়েছেন মাইনুল ইসলাম একজন স্বপ্নবাজ, সাহসী এবং সমাজমুখী তরুণ। আজ তিনি পরিচিত একজন উদ্যমী সংগঠক, শিশু অধিকারকর্মী ও তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম।
শুরুটা খুব সাধারণ। স্কুল জীবনেই বিতর্ক ও বক্তৃতার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন মাইনুল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপনার মাধ্যমে তার জনসেবামূলক যাত্রা শুরু। এরপর যুক্ত হন বিভিন্ন অলাভজনক সংগঠনের সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা, নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস এবং শেখার আগ্রহ তাঁকে গড়েছে আলাদা করে।
বর্তমানে তিনি ‘শাইনিং লাইফ’ নামে একটি তরুণ-কেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। সংগঠনটি শিশু অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সচেতনতা ও মানবিক সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর কাজ করছে। পাশাপাশি তিনি ‘শিশুবন্ধু ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে শিশুদের নিরাপদ বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরিতে কাজ চলছে ধারাবাহিকভাবে।
মাইনুল শুধু সংগঠকই নন, একজন দক্ষ প্রশিক্ষকও। দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে তিনি আয়োজন করেছেন ‘স্মার্ট ইংলিশ ওয়ার্কশপ’ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। বিতর্ক, কুইজ, রচনা, পোস্টার ক্যাম্পেইন থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রোগ্রামÑ সবখানে রয়েছে তাঁর সরব অংশগ্রহণ। এসব উদ্যোগে শত শত শিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হয়েছে, বেড়েছে আত্মবিশ্বাস ও যোগাযোগ দক্ষতা।
তাঁর কাজের স্বীকৃতিও এসেছে দেশ-বিদেশ থেকে। ২০২৩ সালে আরটিভি এসএমসি মনিমিক্স প্রেরণা পদকে ভূষিত হন তিনি। একই বছর ‘গ্লোকাল টিন হিরো বাংলাদেশ’-এর ফাইনালিস্ট হন সারাদেশের ৩৫০-এর বেশি তরুণের মধ্যে। নেদারল্যান্ডসের ‘কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন’-এর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন মাইনুলÑ যা তাকে আন্তর্জাতিক পরিসরেও পরিচিত করে তোলে।
এছাড়াও তিনি দেশের জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখেন। তাঁর লেখায় উঠে আসে সামাজিক সমস্যা, তরুণদের সম্ভাবনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের বার্তা। পাশাপাশি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি করছেন সচেতনতামূলক কনটেন্ট, যা তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সাহায্য করছে।
‘স্বেচ্ছাসেবার মানে শুধু কাজ করা নয়,’ বলেন মাইনুল, ‘বরং নিজের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা এবং নিজের অবস্থান থেকে সমাজকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করা।’ এই মূল্যবোধ থেকেই তিনি তার টিমকে নেতৃত্ব দেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? মাইনুল স্বপ্ন দেখেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করার। তিনি চান এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের তরুণদের গর্বের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করবে।

প্যানেল হু

×