ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

পুরোদমে শিল্পকারখানা চালু করতে চান ব্যবসায়ীরা ॥ বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে

অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি দ্রুত ফিরিয়ে আনার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৮ আগস্ট ২০২৪

অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি দ্রুত ফিরিয়ে আনার তাগিদ

অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ

অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া পুরোদমে শিল্প কারখানা চালু রাখতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্রুত চলমান পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। এজন্য আবারও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা।

এদিকে তিন দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আবার শুরু হয়েছে। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এসসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এসসিসিআই।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, সরবরাহ ব্যবস্থাসহ দেশের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 
এমন বাস্তবতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অর্থনীতি আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। 
এই মুহূর্তে দেশ ও জাতির স্বার্থে শিল্পকারখানা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোদমে সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছে এসসিসিআই। 
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংগঠনের পক্ষ  থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। অর্থনীতির চাকা সচল করতে এবং জাতীয় সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ এসসিসিআই। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জাতীয় অর্থনীতি আগের ধারায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদ জানিয়েছে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এদিকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার পর নিরাপত্তার অভাবে কলকারখানাগুলো এখনো পুরোদমে চালু হতে পারেনি। 
বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে একের পর এক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে গত বুধবার পর্যন্ত সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এমসিসিআই, এসসিসিআই সহ দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটিই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকা- বিশেষ করে উৎপাদন ও সেবা খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির কারণে সার্বিক নিরাপত্তা না থাকায় পণ্য পরিবহন আটকে আছে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানালে  সেনাবাহিনী এগিয়ে আসছে। এদিকে তিন দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আবার শুরু হয়েছে। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এদিন, সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত ১১৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ১৫৩ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। 
আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ আয়রন, ব্লিচিং পাউডার ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, পাটের সুতা, কাঁচা পাট, খালি সিলিন্ডার, জুতা, আরেকা বাদাম ও ভ্রমণ সামগ্রীর লাগেজ। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, সরকারের পদত্যাগের পর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

এ কারণে গত সোমবার দুপুরের পর থেকে ভারতের পেট্রাপোল থেকে পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি কিংবা কোনো ট্রাক ভারতে যায়নি। শ্রমিকেরা কাজ না করায় বন্দরে পণ্য খালাসও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেনাপোল ও পেট্রাপোলে দেড় হাজারের বেশি পণ্যবোঝাই ট্রাকের জট বাঁধে। উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২০০-২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়।

×