ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উইন্টার ট্যুরিজম

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১ ডিসেম্বর ২০২২

উইন্টার ট্যুরিজম

বান্দরবান, নীলগিরি পাহাড়

এবার শীত অনেকটা আগেভাগেই পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে। শীতকালীন পর্যটকের সংখ্যা এবার বেড়ে যাবে, এমনটি আশা করছে ট্যুরিজম বোর্ড। মাঠ পর্যায়ের চিত্রও তাই বলছে। যেমন- দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে হেমন্তের মধ্যভাগে স্থানীয় ও বাইরের পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। শীত মৌসুমের আগেই শীত যে আরও বাড়বে তার আভাস মিলছে বগুড়ার তারকাখঁচিত ও উন্নতমানের হোটেলগুলো থেকে। বাইরের পর্যটকরা ফোন করে বুকিংয়ের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলোর হোটেলগুলোর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে একই আভাস মিলছে। বলাবলি হয় গত দুই বছরের শীত মৌসুমে করোনার কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলো অনেকটাই ফাঁকা ছিল। অনানুষ্ঠানিকভাবে করোনা শিথিল হওয়ায় পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানো আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে কোনো কারণে আগে অথবা পড়ে বাড়তি একদিন ছুটি মিললে। এই সময়ে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও কুয়াকাটায় পর্যটকদের হিড়িক পড়ে যায়।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায় পর্যটন খাতে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা তহবিলের যে পরিকল্পন ছিল তা এবার পুষিয়ে নেয়া যাবে। টার্নওভারও মিলবে। দেশীয় পর্যটকরা ভ্রমণ বাবদ যে খরচ করেন তার চেয়ে বেশি খরচ করেন বিদেশী পর্যটকগণ। তারা দেশীয় শিল্পের কারুকর্য খঁচিত জিনিসপত্র বেশি কেনেন। বড় হোটলে থাকেন। এ থেকে ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ে। পর্যটন খাত থেকে সরাসরি ১৬ হাজার ৪শ’ ৯ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হচ্ছে। পর্যটকদের অর্থ রোলিং করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি আসে।

যেমন করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রায় ৩ লাখ পর্যটক এসেছিলেন। বিদেশীরা এসেছিলেন ১ হাজার ৬শ’ জন। রেভিনিউ আদায় হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে উইন্টার ট্যুরিজমে পূর্বের মৌসুমের চেয়ে শতগুণ বেশি বাণিজ্য হয়। শপিংমল ও হোটলগুলো উইন্টার ট্যুরিজমের অপেক্ষায় থাকেন। তারকা খঁচিত একটি হোটেলের কর্তৃপক্ষ জানালেন শীতকালে বিয়ে-শাদির আয়োজন বেড়ে যায়। এরসঙ্গে সম্পৃক্ত মধুচন্দ্রিমায় (হানিমুন) বাড়তি অর্থ যোগ হয় অর্থনীতিতে।             
মানুষের মধ্যে বিভিন্ন দর্শনীয় ও প্রতœসমৃদ্ধ স্থানে বেড়ানোর প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। তরুণরাও দল বেঁধে ভ্রমণে বের হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজে বের করে। সামাজিক মাধ্যমে সেই স্থানগুলোর স্থির ও ভিডিও চিত্র পোস্ট করে বাংলাদেশকে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে। যা প্রবাসী ও বিদেশীদেরও দৃষ্টি কাড়ে। এ ছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশের নিজস্ব ওয়েব পেজে (ওয়েব সাইট) ভ্রমণ পিয়াসীদের নিরাপদে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের বার্তা দেয়া হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটি (উইক এন্ড), সরকারি ছুটি, বিভিন্ন দিবসের ছুটি, ঐচ্ছিক ছুটি ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও ঘুরে বেড়ানো লোকজনের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। উইন্টার ট্যুরিজমে তা আরও বাড়বে। ছুটি কাটাতে সঙ্গে থাকে পরিবার পরিজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব। পর্যটকরা প্রকৃতির নিসর্গস্থানে ঘুরে বেড়ায়। যেমন সিলেটের বিছানাকান্দি ও রাতারগুল, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাওড়ে গড়ে তোলা নিসর্গ, চন্দ্রবতির পুরাকীর্তির স্থান।

চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ের খইয়াছড়া, শ্রীমঙ্গলের হামহাম ঝরনা, বগুড়ার ভাসুবিহার, সারিয়াকান্দির যমুনার প্রেম যমুনার ঘাট, বান্দরবানের বগালেন, নীলগিরি, বোয়াংছড়ি, তিনাপ সাইতার, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা, সুনামগঞ্জের টাঙুয়ার হাওড়, জাদুকাঠা নদী, দিঘীনালার তৈদুছড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। হালে শ্রীমঙ্গল চা বাগান এবং পঞ্চগড় চা বাগান পর্যটনের বড় স্পট তৈরি হয়েছে। পঞ্চগড় থেকে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হওয়ায় সেখানে পর্যটক বেড়েছে। ঢাকার নিকটবর্তী সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে শীতের অতিথি পাখি দেখার জন্য সেখানেও যান পর্যটকরা।  
 এক হিসাবে বলা হয়েছে দেশে ১ হাজার ৬শ’ ৭৫টি পর্যটন স্পটের মধ্যে শতাধিক স্পট অধিক জনপ্রিয়। এদিকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের ৮শ’র বেশি স্থান পর্যটন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। এর মধ্যে ৪শ’টি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। তরুণরা নতুন যে দর্শনীয় স্থানগুলো খুঁজে বের করছে সেগুলোও পর্যটন স্পটে যুক্ত করা হচ্ছে। দর্শনীয় এই স্থানগুলো সামাজিক মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ায় দেশ ও বিদেশের ভ্রমণ পিয়াসীরা নতুন স্থান খুঁজে পেয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য : বতর্মানে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটক  ১ কোটি ৬০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) তথ্য : বছরে বিদেশী পর্যটক আসেন গড়ে ৮ লাখ। এই সংখ্যাও বাড়ছে।  চট্টগ্রাম সিলেট ও কুয়াকাটায় বেশি পর্যটক যাচ্ছেন। শীতের সময় পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যায়। বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটও রয়েছে।

পর্যটন স্পটের গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের ৭২টি স্থানে ও পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি ভ্রমণে সহযোগিতা দিচ্ছে।

×