ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পাওয়ার পরও বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করলো যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৭, ২০ জুলাই ২০২৫

ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পাওয়ার পরও বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবিঃ সংগৃহীত

অসাধারণ এক সুযোগের দরজা খুলে গিয়েছিল এক বাংলাদেশি তরুণের সামনে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব রেডল্যান্ডস থেকে তিনি পেয়েছিলেন বছরে প্রায় ৬২ হাজার ডলারের স্কলারশিপ—যা মোট টিউশন ফি’র ৯৯% কভার করত। নিজের পড়াশোনার বাকি খরচ বাবদ তার পরিবার প্রস্তুত রেখেছিল ৭৫,০০০ ডলার। কিন্তু এত প্রস্তুতি, এত স্বপ্ন—সব কিছুই যেন এক মুহূর্তে থেমে গেল, যখন মাত্র দুইটি প্রশ্নের পর মার্কিন ভিসা অফিসার তাকে ফিরিয়ে দিলেন।

এই সাক্ষাৎকারটি হয়েছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে, ২০২৫ সালের ১৫ জুলাই।

সাক্ষাৎকার যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা
যেখানে শিক্ষার্থীরা ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য নথিপত্র, প্রমাণপত্র, আর্থিক পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রস্তুতি নিয়ে যান—সেখানে এই শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা ছিল বিস্ময়করভাবে সংক্ষিপ্ত।

প্রথম প্রশ্ন ছিল:
"তুমি কীভাবে পড়াশোনার খরচ চালাবে?"
তিনি উত্তর দেন, “আমার স্কলারশিপ ৯৯% খরচ কভার করছে, আর আমার বাবা-মা—যাঁদের সঞ্চয় ৭৫,০০০ ডলার—বাকিটুকু বহন করবেন।” তিনি আরও জানান, তার বাবা একজন সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং একটি কোচিং সেন্টারও চালান।

দ্বিতীয় প্রশ্ন:
"পড়াশোনা শেষে কী করতে চাও?"
তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, “বাংলাদেশে ফিরে একটি ডেটা অ্যানালিটিক্স কোম্পানি খুলতে চাই, যা ট্রাফিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।”

এই কথা বলার পরই ভিসা অফিসার আর কিছু জিজ্ঞাসা করেননি, এমনকি তার I-20 ফর্ম বা আর্থিক নথিপত্র দেখাও প্রয়োজন মনে করেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে তার ভিসা আবেদন ২১৪(b) ধারায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

মন ভাঙা এক প্রত্যাখ্যান
সবকিছু এত নিখুঁতভাবে প্রস্তুত থাকলেও, ভিসা প্রত্যাখ্যানের পর শিক্ষার্থীর মনে প্রশ্ন জাগছে—“আমি কোথায় ভুল করলাম?”

তিনি বলেন, “আমার পরিবার শুধু স্বপ্ন দেখেনি, তারা সেটি পূরণে প্রস্তুত ছিল। আর্থিকভাবে আমরা প্রস্তুত ছিলাম, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট, আর আমি নিজের দেশে ফিরে কিছু করতে চেয়েছিলাম। তবুও কেন আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো—তা বুঝতে পারছি না।”

আবারও চেষ্টা করার ইচ্ছা
ইউনিভার্সিটির ক্লাস শুরু হতে এখন মাত্র ৪০ দিন বাকি। সেই শিক্ষার্থী ভাবছেন ২০-২৫ দিনের মধ্যেই আবারও ভিসার জন্য আবেদন করবেন। এবার তিনি আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে চান। আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে DS-160 ফর্মে সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন এবং নিজের স্কলারশিপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব বোঝাতে চান।

“হয়তো নার্ভাস ছিলাম, তাই ঠিকমতো বোঝাতে পারিনি আমি কতটা প্রস্তুত ছিলাম,”—বলে জানালেন তিনি।

একটি অনিশ্চয়তা, অনেক প্রশ্ন
এই ঘটনাটি শুধুই একজন শিক্ষার্থীর গল্প নয়। এটি প্রশ্ন তোলে একটি বৃহত্তর ব্যবস্থার উপর—যেখানে একজন মেধাবী, আর্থিকভাবে প্রস্তুত তরুণ শুধুমাত্র কয়েকটি প্রশ্নের ভিত্তিতে তার স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে পড়ে।

আমরা আশা করি, এই শিক্ষার্থী আবার চেষ্টা করবে এবং এবার তার স্বপ্নের পথ খুলে যাবে। কারণ প্রতিটি স্বপ্নপূরণের পেছনে থাকে একটি লড়াই, আর সে লড়াইয়ে হাল না ছাড়াই সাফল্যের চাবিকাঠি।

 

 
 

মারিয়া

×