
মধু একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, যার প্রধান উপাদানই চিনি। আর চিনি মানেই ব্যাকটেরিয়ার প্রিয় খাদ্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মধু সহজে পচে না। sealed অবস্থায় এই সোনালি তরল বছর বছর পর্যন্ত নষ্ট হয় না। তাহলে কীভাবে মধু এই পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়?
মধুর রসায়ন ও মৌমাছির কারুকাজ
খাবার পচে যাওয়া মানে মূলত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ছাঁচের মতো অণুজীবদের আক্রমণ। অধিকাংশ সংরক্ষণ পদ্ধতির উদ্দেশ্যই হলো এই অণুজীবদের কার্যক্ষমতা রোধ করা—চিকেন শুকানো, খাবার ফ্রিজে রাখা, আচারে ডুবিয়ে রাখা বা বায়ুনিরুদ্ধ জারে সংরক্ষণ করা এসবেরই উদাহরণ।
তবে মধু ব্যতিক্রম। মৌমাছিরা ফুলের মধুরস সংগ্রহ করে, এরপর সেটির পানি কমিয়ে আনে ও তাতে এনজাইম যোগ করে অম্লতা বাড়ায়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষতিকর অণুজীবই বেড়ে উঠতে পারে না। তারপর মধু মৌচাকের খোপে সংরক্ষণ করা হয় এবং মৌমাছিরা তাদের পাখা ঝাপটে সেই তরল থেকে আরও পানি কমিয়ে দেয়। এর ফলে মধুর পানি-অনুপাত নেমে আসে মাত্র ১৫%-১৮% এ।
এই ‘কম পানি কার্যকারিতা’ (low water activity) মধুকে সংরক্ষণশীল খাদ্য করে তোলে। মধুর উচ্চ চিনি মাত্রা ও অম্ল পরিবেশ অণুজীবদের বেঁচে থাকার জন্য অনুপযোগী করে তোলে। আর যখন মধুকে সিল করা জারে রাখা হয়, তখন বাতাসের অভাব আরও একটি সুরক্ষা দেয়।
কেন মধু পচে না?
-
নিম্ন পানি পরিমাণ: অণুজীবদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি দরকার। মধুতে তা থাকে না।
-
উচ্চ অম্লতা: ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের জন্য অনুকূল নয়।
-
উচ্চ চিনি ঘনত্ব: পানি ও চিনির অনুপাত এতটাই বেশি যে স্বাভাবিকভাবে দ্রবীভূত করা অসম্ভব।
-
বায়ুনিরুদ্ধ সংরক্ষণ: অক্সিজেনের অভাবে অণুজীবদের বিকাশ বন্ধ হয়।
সতর্কতা
তবে মধু একেবারেই অমর নয়। একবার জার খোলা হলে, এর উপরিভাগে বাতাস, আর্দ্রতা ও জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। মুখ লাগানো চামচ দিয়ে তুললে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়ে। তাই মধু ব্যবহারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি।
অবশ্য, যদি আপনি ইচ্ছা করে মধুতে পানি ও ব্যাকটেরিয়া যোগ করেন, তাহলে তৈরি হয় এক অনন্য পানীয়—মীড (Mead)। প্রাকৃতিক ভাবে নষ্ট না হওয়া এই মধু তখন রূপ নেয় এক ঐতিহ্যবাহী মদে—যেটি গ্রীষ্মের দিনে ছায়ায় বসে উপভোগের মতোই।
Jahan