ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৬ অক্টোবর ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

পাঁচদিনের বর্ণিল উৎসব শেষে খোলা হচ্ছে পূজা ম-পের সামনের তোরণ

বাঙালী বরাবরই উৎসবপ্রিয়। যে কোন উৎসবে দারুণ মেতে উঠতে জানে। ফসল কেন্দ্রিক বা ঋতু ভিত্তিক উৎসবগুলোতে কতই না আনন্দ হয়। বর্ণিল উদ্যাপন চোখে পড়ে। পহেলা বৈশাখের কথাই যদি বলি, বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন কেউ ঘরে বসে কাটাতে চান না। গ্রামে নানা আচার পালন করা হয়। বসে লোকজন পণ্যের মেলা। রাজধানীতেও একই চেতনার জায়গা থেকে নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনের ক্ষেত্রে ধর্ম বর্ণের কোন বাছবিচার থাকে না। সবাই মিলে উদার অসাম্প্রদায়িক বাঙালী প্রাণের প্রতিধ্বনি করেন।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এটাই তো চাওয়া ছিল। এ চাওয়া কখনও মার খায়নি বা খাচ্ছে না, এমন নয়। তবে দিন শেষে জয় হচ্ছে বাঙালী চেতনারই। বুধবার শেষ হওয়া দুর্গোৎসবেও আমরা তাই দেখলাম। হ্যাঁ, এটি ধর্মীয় উৎসব। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। তবে ‘ধর্ম যার যার/উৎসব সবার।’ অর্থাৎ ধর্মীয় উৎসবগুলোও সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। দুর্গাপূজার বেলায়ও তাই দেখা গেল। শহরে এবার ২৪১টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যে কোন গন্তব্যে বের হলে পথিমধ্যে কোথাও না কোথাও ম-প চোখে পড়েছে।

মণ্ডপ ঘিরে আশপাশের এলাকার মানুষের সে কী ভিড় লেগেছিল। পূজার পর্বটি হিন্দুরা নিজেদের মতো করে সেরেছেন। তবে উৎসবের যে আনন্দ সে আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরাও। এই ভাগাভাগি আসলে ভাগাভাগি নয়। সবাই মিলে মানুষ পরিচয়ে বাঁচার বাসনা। রাজধানীর ম-পগুলোতে তাই মুসলিম খ্রীস্টান বা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। যে কোন ম-পে গেলে বিশেষ করে মুসমানদের নিশ্চিতভাবে পাওয়া গেছে। একদম কাছে গিয়ে কৌতূহলী চোখে প্রতিমা দেখছেন তারা। কেউ তাদের বাধা দেননি। কতটুকু যেতে পারবেন, সে সীমানা নির্ধারণ করে দিতে আসেননি কেউ।

নতুন ঢাকার বনানী পূজা ম-প থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের ছোট্ট গলি পর্যন্ত সবখানেই সবার উৎসব লক্ষ্য করা গেছে। বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সমস্ত আয়োজন। আশার কথা যে, এবার কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দুর্গোৎসব শুরুর কিছুদিন আগেও উগ্র মৌলবাদীদের আস্ফালন চোখে পড়েছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার নানা চেষ্টা আমরা দেখেছি। দুর্গোৎসব ঘিরে কিছুটা শঙ্কা তাই রয়েই গিয়েছিল। শেষতক সব ভালভাবে শেষ হয়েছে। উৎসব শেষ হলেও এর রেশে রয়ে গেছে এখনও। এই আনন্দের রেশ এভাবেই থেকে যাক। জয় হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের।

পাঁচ ঘণ্টার অন্ধকারে নাগরিক জীবন ॥ টানা পাঁচ ঘণ্টার অন্ধকার। ঢাকার জন্য এর চেয়ে বড় দুর্যোগ আর কী হতে পারে ? গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই বিদ্যুত চলে যায়। তখনও বোঝা যায়নি যে, বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে। বরং মনে করা হচ্ছিল, বিদ্যুত চলে আসবে যে কোন মুহূর্তে। ক্রমে সেই ভুল ভাঙ্গে। জানা যায়, বিদ্যুত সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটেছে। এর প্রভাবে অন্ধকারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ বৃহত্তর ঢাকার পুরোটাই। ফলে একদিকে শুরু হয় দুর্ভোগ।

অন্যদিকে দুশ্চিন্তা। কখন বিদ্যুত আসবে এ নিয়ে মহা উদ্বেগ দেখা দেয় নগরবাসীর মধ্যে। শেষতক রাত ৮টা নাগাদ বিদ্যুত সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে রাজধানীর জীবনে এত লম্বা সময় বিদ্যুতহীন কাটানোর ঘটনা বিরল। যত সময় যাচ্ছিল ততই বাড়ছিল সঙ্কট। কেউ কেউ অবশ্য ভীষণ খুশি বলেও মনে হয়েছে। তারা গাল ভরে গল্প করেছেন, ‘বুঝলেন তো, এই হলো শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন। দেশে নাকি শতভাগ বিদ্যুত। বাস্তবে সব অন্ধকার। সবই বুলি।’ আরও অনেক কথা। এসব কথা বলা লোকেরা কথা বলার ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন।

কিন্তু যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজেদেরও যে প্রস্তুতি থাকতে হয় সে বিষয়টি তারা বেমালুম ভুলে ছিলেন। জ্বালানি কম থাকায় অনেক জেনারেটর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উঁচু ভবনের লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেও খবর পাওয়া গেছে। কী ভয়ঙ্কর ! এখন আবার ঘরে ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। দরজা জানালা ঠিক মতো খোলা হয় না। সে ব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে রাখা হয়নি। লোডশেডিং হলে নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে অনেকেরই। কিন্তু লম্বা সময়ের সঙ্কট মোকাবেলা হবে কী করে ? ফলে বেশিরভাগ বাসা বাড়িতে একটা বা দুটো বাল্ব কোন রকমে জ্বলেছে।

কিছু সময় জলে আবার অন্ধকার হয়ে গেছে পুরো বাসা। তখন মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, কোন কোন বাসায় মোমবাতি ছিল না। এমনকি দিয়াশলাই ছিল না। তার মানে, যে দুর্যোগ মোকাবেলায় একেবারেই প্রস্তুত নয় রাজধানীবাসী। প্রস্তুত যে নয়, সে তথ্যটিও সামনে আনল লম্বা সময়ের বিদ্যুত বিপর্যয়। এদিকে, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এমন দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এমনটি হতেই পারে। দুঃখ প্রকাশ করেই এ কথা বলেছেন তিনি। এ সত্যকে অস্বীকার করার তো কোন জো নেই। বরং নিজেদেরও কিছু প্রস্তুতি রাখতে হবে। ভবিষ্যতে অন্তত বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত সবার।

×