বগুড়া নগরীতে গড়ে উঠছে নানা উচ্চতার হাইরাইজ ভবন
আগে ছিল শহর। এখন লোকমুখে নগরী। বিশ বছর আগের বগুড়া শহরের সঙ্গে আজকের বগুড়া নগরীকে কোনভাবেই মেলানো যায় না। দিনে দিনে নগরায়নের পরিধি বাড়ছে। বেশিরভাগই অপরিকল্পিত। ক’বছর আগের শহরতলিও এখন নগরী। ভবনগুলো আকাশমুখী। মনে হবে কংক্রিটের বন। ঢেকে দেয় বিকেলের সোনারোদ। ফিডার রোডগুলো হয়ে যাচ্ছে ঘিঞ্জি।
দ্রুত নগরায়নের পালায় থাবা পড়েছে সরাসরি ফসলি ভূমির ওপর। বগুড়া নগরী চারদিকে সম্প্রসারিত হওয়ায় গিলে ফেলছে জমিগুলো। গত এক যুগে বগুড়ায় আবাদি ভূমি কমেছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর। এই পরিমাণ তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কথা : আবাদি ভূমি কমেছে ঠিকই। উৎপাদনের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সকল ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত আসায় কম জমিতে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। নগরী সম্প্রসারিত হচ্ছে তবে ভবনগুলো হচ্ছে হাইরাইজ বা আকাশমুখী। যে কারণে ফসলি ভূমি খুব একটা কমছে না।
বগুড়া উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী নগরী হওয়ায় এই এলাকার জমির দাম অনেক বেশি। চাকরির কারণে যারা ঢাকা ও অন্য জেলা থেকে বগুড়ায় আসেন তাদের বড় একটি অংশ শেষ পর্যন্ত বগুড়ার অভিবাসী হয়ে যান। প্রথমে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তারপর বসতবাড়ি গড়ার জন্য জায়গা কেনেন। একটা পর্যায়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। কেউ ইনস্টলমেন্টে ফ্ল্যাট বাড়ি কেনেন। আরেকদিকে একদার শিল্প নগরী বগুড়া ঐতিহ্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতমানের নগরীতে। যা চলমান। অত্যাধুনিক মার্কেট, রাজধানী ঢাকার মতো শপিংমল, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বহুতল শপিং কমপ্লেক্স, বড় কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শো-রুম ও কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, পাঁচ তারকা খঁচিত মর্যাদার হোটেল, সিনে কমপ্লেক্স, রেন্ট কার কোম্পানিসহ উন্নত অবকাঠামো গড়ে উঠছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী বগুড়া মহাস্থানগড়কে পর্যটক আকর্ষণে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলায় পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়েছে।
বগুড়া নগরী ডেভলপারদের আকর্ষণ করছে। তারা নগরীর বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা ছাড়াও শহরতলী এলাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে ভূমি কিনে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করছে। ডেভেলপাররা যাদের জায়গা কিনে ফ্ল্যাট বানাচ্ছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে। বহুতল ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাট ভূমির মালিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়। নগরীর আশপাশে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠছে। যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে খ-িত হওয়ায় অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেড়ে যাওয়ায় অধিক মানুষের বাসস্থান গড়তে ফ্ল্যাট বাড়ি বেড়েছে। এভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ন প্রক্রিয়া।
প্রায় দেড় যুগ আগে বগুড়া পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এই আয়তন বেড়ে হয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার। ১২টি ওয়ার্ড বেড়ে হয়েছে ২১ ওয়ার্ড। এর বাইরেও নগরায়ন প্রক্রিয়া চলছে। বগুড়া নগরীতে ৬তলা ভবনের অনুমতি দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। এর চেয়ে বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে চাইলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের যৌথ অনুমতিতে ১২তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যায়। এ জন্য শর্ত থাকে। যেমন ভবনের সম্মুখের সড়কের চওড়া ফুটপাত ছাড়া অন্তত ২৪ ফুট হতে হবে। তবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৮তলা পর্যন্ত ভবন নির্মিত হয়েছে। ফিডার রোডের দুই ধারে অনেক বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। একটি সূত্র জানায় এর বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের জন্য ভবন মালিক ও ডেভেলপরারা ঢাকা থেকে অনুমতি আনে। অনেক পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিংকোড মানা হচ্ছে না। হাইরাইজ ভবন নির্মিত হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজের ব্যবস্থা থাকছে। ওয়াটার হাইড্রেন্ট (অগ্নি নির্বাপনে পাকা জলাধার) নির্মাণ হচ্ছে না। এই বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন হাইরাইজ ভবনে ওয়াটার হাইডেন্ট ফায়ার এক্সটিংগুইসার থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিতে হয়।
বগুড়া নগরীর কাছাকাছি স্বল্প দূরত্বের উপজেলাগুলোতে একইভাবে আবাদি ভূমিতে ঘর বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকারী বেসরকারী স্থাপনা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে উত্তরের গোকুল হয়ে মহাস্থানগড়, পূর্বের গাবতলি, পশ্চিমের কাহালু দক্ষিণের, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি পর্যন্ত নগরায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পাঁচ উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই ভাল যে লোকজন পনের মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনে (বাস, মিনি বাস সিএনজি চালিত অটোরিক্সা) বগুড়া নগরীর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তারা নগরীর উপকণ্ঠে বসবাসের আমেজ পান।