ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জের বনের বিপন্ন বনমোরগ

দ্রুত দৌড়াতে পারে, দিতে পারে উড়ালও

মোঃ মামুন চৌধুরী

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২০ আগস্ট ২০২২

দ্রুত দৌড়াতে পারে, দিতে পারে উড়ালও

মৌলভীবাজারের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বিচরণ করছে বনমোরগ

আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মোরগের মতোই মনে হয়বাস্তবে তা নয়বনমোরগ কিছুটা আলাদা প্রজাতিরপাখির স্বভাব আছেডানা দুটোও ভাল ব্যবহার করতে জানেশক্তি-সামর্থ্যও সাধারণ মোরগের চেয়ে বেশিহবিগঞ্জের বনে এ ধরনের মোরগের দেখা মেলে

জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অপেক্ষাকৃত দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়িএগুলোর মধ্যে রেমা-কালেঙ্গা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহ প্রাকৃতিক বনভূমিএ বনে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখির আবাসস্থলবিশেষ করে সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গার অরণ্যে বনমোরগ ও বনমুরগি দেখা যায়সকাল-সন্ধ্যায় এদের ডাক কানে আসেবনের কোন গাছতলায় পাকা ফল ঝরে পড়লে বনমোরগ খেতে চলে আসেআবার বনের বড় গাছে উঠেও ফল খায় এরা

বনমোরগ দেখতে গৃহপালিত মোরগ-মুরগির মতোইতবে মোরগের লেজের দুটি পালক লম্বা থাকেধারণা করা হয়, এরাই গৃহপালিত মোরগ ও মুরগির পূর্বপুরুষসুদূর অতীতে এশিয়া অঞ্চলে বনের এই পাখিকে পোষ মানানো হয়পাহাড়ের পাদদেশে ঘন প্রাকৃতিক ঝোপের ভেতর মাটিতে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এরা বাসা করে

পাহাড়, টিলা, চা বাগান ও প্রাকৃতিক ঘনবনের কাছাকছি নিরাপদ খোলামাঠে একাকী, জোড়ায় ও দলবদ্ধভাবে চরে বেড়ায়প্রধানত, ফল, বীজ, শস্যকণা, কচি পাতা, কেঁচো ও কীটপতঙ্গ এদের খাদ্যশীতের সময় কুয়াশা থাকা অবস্থায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়

এ ব্যাপারে বনগবেষক মোঃ আহমদ আলী বলেন, ‘বনমোরগ খুব সপ্রতিভ ধরনের হয়মানুষের পায়ের শব্দ পেলেই দ্রুত পালিয়ে যায়এরপরও বনমোরগ শিকার থেমে নেইএকটি চক্র দুর্লভ প্রজাতির মোরগ নিঃশেষ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেফলে সংখ্যাটা দিন দিন কমছেবিপন্ন পাখির তালিকায় এখন বনমোরগ

তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের চা বাগান ও বন না থাকলে বনমোরগ প্রায় বিলুপ্তই হয়ে যেতশিকারিরা চা বাগানে ঢুকতে পারে না বলে ঘন চা বাগানে এরা অনেকটা নিরাপদে থাকেতবে প্রাকৃতিক বনে বাস করা শিকারিরা বনমুরগি শিকার তো করেই, উপরন্তু বাসা থেকে ডিম ছিনিয়ে নেয়

হবিগঞ্জের পাখিপ্রেমিক সোসাইটির সভাপতি মোঃ মোজাহিদুর রহমান মসি বলেন, রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি বনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বনমোরগ আছেখুব সকালে ও সন্ধ্যার আগে বনের কাছাকাছি খোলা জায়গায় খাবার খেতে বের হয়দ্রুত দৌড়াতে পারেপ্রয়োজন হলে দিতে পারে উড়ালও

রেমা-কালেঙ্গা বনের কালিয়াবাড়ি আদিবাসী পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, বনমোরগ মাঝারি আকারের ভূচর পাখিএদের মাথায় ঝুঁটি ও গলার দুই পাশে দুটি ঝুলন্ত লতিকা থাকেবনের মোরগ রক্ষায় বন বিভাগকে তারা সার্বিকভাবে সহায়তা করছেও বলে জানান তিনি

সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, অন্যান্য পশুপাখির পাশাপাশি বনমোরগের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ উদ্যানটি প্রিয় হয়ে উঠেছেতা ছাড়া এখানে যাতায়াতও সহজ

এদিকে জরিপ বলছে, এখানে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছেআদিবাসী সম্প্রদায় ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ং এই বনভূমির আশপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করেবিরল প্রজাতির মেছো বিড়ালের বিচরণও রয়েছে এ জঙ্গলেএসবের সঙ্গেই বসবাস করছে বনমোরগএ প্রাণিটি এ বনের ঐতিহ্য বহন করছে

যতদূর জানা যায়, হবিগঞ্জ ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন, চা বাগান, শেরপুর ও মধুপুর শালবন ও সুন্দরবনে বনমোরগ বাস করেদেশের বাইরে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ায় বনমোরগ দেখা যায়

×