ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হোল্ডিংকে ছাড়িয়ে কেমার রোচ

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৮ জুন ২০২২

হোল্ডিংকে ছাড়িয়ে কেমার রোচ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ তার প্রিয় প্রতিপক্ষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রাই শুরু করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৯ সালে। নিয়মিত ক্রিকেটাররা বিদ্রোহ না করলে হয়তো অতটা দ্রুত টেস্ট ক্যারিয়ার শুরুই হতো না কেমার রোচের। যদিও আগের বছরই ওয়ানডে ও টি২০ অভিষেক হয়ে যায় তার। কিন্তু সেই দুই ফরমেটের চেয়ে টেস্টেই এখন অপরিহার্য তিনি দলের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২ বছর আগে সৌভাগ্যক্রমে হওয়া যাত্রার শুরুটা দারুণ হয়েছে তার। ৪ ইনিংসে নেন ১৩ উইকেট, সেরা সেন্ট জর্জেসে ৪৮ রানে ৬ উইকেট। সেটিই এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং পারফর্মেন্স তার। ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের, এখন সেই সাকিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে পেরিয়ে গেছেন ২৫০ উইকেটের মাইলফলক। উইন্ডিজের মাত্র ষষ্ঠ বোলার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবমিলিয়ে ৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন, ক্যারিয়ারে ১০ বার। বাংলাদেশের এই ত্রাস এখন ক্যারিবীয় কিংবদন্তিদের কাতারে। দ্বিতীয় ইনিংসে আতঙ্ক ছড়িয়ে ৩ উইকেট দখল করে এখন টেস্টে তার শিকার ২৫২টি। ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিংকে (২৪৯ উইকেট) এবং ছুঁতে চলেছেন আরেক কিংবদন্তি জোয়েল গার্নারকে (২৫৯)। ইনজুরি সমস্যায় এ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে খেলতে নামেন। আর নেমেই ম্যাজিক দেখিয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসের শুরুতেই ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশী ব্যাটিং লাইনে ধসের শুরু করেন। আর কোন উইকেট রোচ পাননি, কিন্তু বাংলাদেশ সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না পেরে ১০৩ রানেই গুটিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখিয়েছেন আরেকবার। ক্যারিয়ারে ১০ম এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ২৪৫ রানেই গুটিয়ে দেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। আর এর মাধ্যমে ছুঁয়ে ফেলেন হোল্ডিংকে। সেন্ট লুসিয়া টেস্টে তার সুযোগ ছিল ষষ্ঠ ক্যারিবীয় বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট স্পর্শের। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তাকে সুযোগ দেননি আলজারি জোসেফ, জেইডেন সিলসরা। তবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হতেই আর অপেক্ষা করেননি। ৩৩ বছর বয়সী এ ডানহাতি ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তামিম ইকবালকে (৪) ও সপ্তম ওভারে মাহমুদুল হাসান জয়কে (১৩) শিকার করে আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। পরে এনামুল হক বিজয়কেও (৪) এলবিডব্লিউ করে দেন। তামিমের উইকেটটি ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫০তম। গত ২১ বছরের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোন বোলার ২০০ টেস্ট উইকেটও শিকার করতে পারেননি, সেখানে রোচ পেরিয়ে গেছেন ২৫০! ২০০১ সালে অবসরে গেছেন উইন্ডিজের সর্বশেষ কিংবদন্তি বোলার কোর্টনি ওয়ালশ। তিনি ১৩২ টেস্টে ৫১৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের ইতিহাসে সবার ওপরে। এরপরই ২০০০ সালে অবসরে যাওয়া আরেক কিংবদন্তি কার্টলি এ্যামব্রোস ৯৮ টেস্টে ৪০৫ উইকেট নিয়ে। সেখানেই থেমে গেছে একসময় বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব পেসারের স্বর্গভূতি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে পেসারদের দৌরাত্ম্য। ২০০৯ সালে রোচ যখন শুরু করেন, তখন তার মধ্যে দেখা গেছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। সেটা তিনি এখন বাস্তব করেছেন। ৭৩ টেস্টের ১৩২ ইনিংস বোলিং করে ২৫২ উইকেট তার পাশে। ওয়ালশ, এ্যামব্রোসের পর ম্যালকম মার্শাল (৩৭৬), ল্যান্স গিবস (৩০৯) ও গার্নার (২৫৯)। এখন ছয়ে থাকলেও অচিরেই পাঁচে উঠতে যাচ্ছেন রোচ। ছাড়িয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার রিচি বেনো (২৪৮) এবং স্পর্শ করেছেন ইংলিশ কিংবদন্তি ব্রায়ান স্ট্যাথামকে (২৫২)। আরও উঁচুতে পৌঁছুতে চলেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ টেস্টে ২০ ইনিংসেই ৪৪ উইকেট নেয়া রোচ।
×