ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত গোটা ত্রিপুরা

প্রকাশিত: ২০:২৬, ২৬ জুন ২০২২

রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত গোটা ত্রিপুরা

অনলাইন ডেস্ক ॥ রাজধানী আগরতলা শহরসহ গোটা ত্রিপুরা রাজ্য অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যজুড়ে দিনভর দফায় দফায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৬ জুন) উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহাসহ বহু কংগ্রেসকর্মী। রবিবার ত্রিপুরা রাজ্যের চারটি বিধানসভা আসনের ফল ঘোষণার পর দুপুরে রাজধানী আগরতলা পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকার ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে একদল দুষ্কৃতী আক্রমণ চালায়। ভবনের সামনে রাখা মোটরবাইক ভেঙে ফেলা হয়। কংগ্রেসের তরফে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, মঞ্চটি ভেঙে ফেলে দুষ্কৃতীরা। পশ্চিম আগরতলা থানার ১০০ মিটারের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। তখন দুষ্কৃতীদের সামনে দাঁড়িয়েছিলো পুলিশ। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। তাদের সামনে দুষ্কৃতীরা একের পর এক মোটরবাইক ভেঙে ফেলে ছোট ছোট দোকানে আক্রমণ চালায়। কংগ্রেস ভবনের দিকে চলে ঢিল, ইট, পাটকেল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে কংগ্রেস ভবনের দিক থেকেও পাল্টা ইট-পাটকেল আসে। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে ইট বৃষ্টি চলে। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতীদের আটকানোর চেষ্টা করেনি, বন্দুকসহ লাঠি নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে হামলার দৃশ্য উপভোগ করে। এমনকি দুষ্কৃতীর দল সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার এবং এসব দৃশ্য ধারণ না করার জন্য হুমকি ধমকি দেয়। কিছুক্ষণ পর কংগ্রেস ভবনের সামনে বিজেপির এক ঝাঁক নেতা এবং কর্মী-সমর্থকদের দেখা যায়। এর ফলে এই এলাকায় উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এই জায়গা থেকে ভিড় সরাতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে বাধ্য হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিজেপি নেতা এবং মন্ত্রী রতন লাল নাথ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীসহ অন্যান্য আরও কয়েকজন নেতা পশ্চিম আগরতলা থানায় গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী রতন লাল নাথ পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা চাইলে ৫ মিনিটের মধ্যে ওদেরকে (বিরোধীদের) ধরে আনতে পারবে। এমনকি এই কাজে পুলিশের প্রয়োজন হবে না। তার এই আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুনে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তারাই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সবাই যেন শান্তি সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর সুদীপ রায় বর্মনসহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দাবি জানান দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেওয়ার জন্য। পুলিশের সঙ্গে কথা বলা শেষে প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন সুদীপ রায় বর্মনসহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা। তখন সুদীপ রায় বর্মন অভিযোগ করেন, তিনি ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে আসেন। তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাইক নিয়ে এসে কংগ্রেস ভবনে ভাঙচুর চালায়। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আক্রমণের ফলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহার মাথায় আঘাত লাগে এবং তার মাথা ফেটে যায়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাশাপাশি রুনু মিয়া নামে এক কংগ্রেসকর্মীকে ছুরি মারে দুষ্কৃতীর দল। এই কর্মী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন সুদীপ রায়। তিনি আরও বলেন, এই উপনির্বাচনে সাধারণ মানুষ চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। জনতার রায় শাসকদল মানতে পারছে না, তাই দুষ্কৃতীদের দিয়ে এসব ঘটনা সংঘটিত করছে। তিনি আরও বলেন, কোনো সভ্য দেশে এভাবে দিনের বেলা এমন ঘটনা ঘটবে তা ভাবাই যায় না। ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানকে কালিমালিপ্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করে এসব করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সুদীপ রায় বর্মন। তবে এসব ঘটনার প্রভাব রাজ্য রাজনীতিতে দীর্ঘদিন থাকবে বলে জানান তিনি। সুদীপ রায় বর্মন জানান, রাজ্যের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে কয়েকদিনের মধ্যে ডেকে বসে আগামী দিনের রণকৌশল ঠিক করা হবে। এভাবে চুপচাপ বসে থেকে আর বিরোধী দল মার খাবে না। এদিন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশকে এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসারও দাবি জানান তিনি। রবিবারের ঘটনার জন্য মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান সুদীপ রায় বর্মন। আগরতলার পাশাপাশি তেলিয়ামুড়া খোয়াই কল্যাণপুর কমলাসাগর রাজ্যের প্রতিটি জায়গাতেই কংগ্রেস ভবনের অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
×