ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মাপাড়ের উচ্ছ্বাস ঢাকায়

প্রতীকী সেতু, শোভাযাত্রা আলো ঝলমলে নগরী

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৬ জুন ২০২২

প্রতীকী সেতু, শোভাযাত্রা আলো ঝলমলে নগরী

মোরসালিন মিজান ॥ একটি সেতু ঘিরে গোটা জাতি উচ্ছ্বসিত। যে যেভাবে পারছেন আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। পদ্মাপাড়ের আনন্দ-উত্তেজনা ছুঁয়ে যাচ্ছে ঢাকাকেও। সেতু উদ্বোধনের অনেক আগে থেকেই আবেগে ভাসছিলেন রাজধানীর মানুষ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে শনিবার সেই আবেগ যেন পূর্ণতা পেল। প্রধান প্রধান সড়কে, সড়কদ্বীপে, অলি-গলিতে, পাড়ায়-মহল্লায় এখন উৎসবের আমেজ। কারণটিও স্পষ্ট, বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের টাকায় এই বিরাট সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। আর কোন মেগা প্রকল্পের বেলায় এত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়নি এবং চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে। সাধারণত বড় প্রকল্পের বেলায় দাতাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। পদ্মা সেতু সেই পুরনো ফ্রেম থেকে বের হয়ে এসেছে। আর আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে সে তো অস্বীকার করার সাধ্য কারও নেই। সব মিলিয়ে দিনটি উদ্যাপনের বৈকি। এ দিন সকালে পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে পদ্মার দুই পাড়েই ছিল নানা আয়োজন। আয়োজনগুলো ঘরে বসে উপভোগ করেছেন রাজধানীবাসী। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করায় সবাই উৎসবের সঙ্গে নিজেকে সহজে একাত্ম করতে পেরেছেন। পাশাপাশি ঢাকার অলি-গলিতে বসানো হয় প্রজেক্টর। প্রজেক্টরের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার সুযোগ পান ভ্রাম্যমাণ দর্শক। রাজনৈতিক দল ও পাড়া-মহল্লার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বড়-বড় টেলিভিশন স্ক্রিন বসানো হয় বিভিন্ন স্থানে। ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের পাশের একটি রাস্তায় প্রজেক্টর বসানো হয়। ফুটপাথের সাধারণ ব্যবসায়ীরা এখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেন। পাড়া-মহল্লাতেও ছিল এমন আয়োজন। আজিমপুর সরকারী কলোনির একটি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকারী কলোনির বি জোনের কমন ফ্যাসিলিটিজ ভবনের দোতলায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন দেখেন কলোনির বাসিন্দারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ছিল বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। উদ্যাপনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী ভবন সাজানো হয়েছে মরিচবাতি দিয়ে। সন্ধ্যা হতেই বর্ণিল হয়ে উঠছে শহর। আলাদা করে বলতে হয় হাতিরঝিলের কথা, ঝিলের বিভিন্ন গাছের শাখা-প্রশাখা ও পাতার ফাঁকে ছোট-ছোট আলোর ফুল। বিভিন্ন স্থাপনায়ও আলো জ্বলছে। স্থলভাগের রঙিন আলো ঝিলের পানিতে এসে পড়তেই সেখানে আরেক ব্যাঞ্জনার সৃষ্টি হচ্ছে। কাওরানবাজার, মগবাজার, পুলিশ প্লাজা, রামপুরাসহ যে কোন পথ দিয়ে প্রবেশ করলেই হলো, নতুন কোন আনন্দ নগরী! সেতু বিভাগের উদ্যাপনে যোগ দিচ্ছে ঝিলের দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন বয়সী সুসজ্জিত স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। গল্প-আড্ডা জমাচ্ছেন। তাদের কথায় ঘুরে ফিরেই আসছে পদ্মা সেতুর কথা। সন্ধ্যায় হাতিরঝিলে ছিল লেজার শো। আকর্ষণীয় লেজার শোয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতুসহ শেখ হাসিনা সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরা হয়। তবে পদ্মা সেতু চালুর আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয় আতশবাজিতে। ব্যাপক আতশবাজির আলোয় ঝলমল করে ওঠে আকাশ। রাতে কলাবাগান মাঠসহ রাজধানীর আরও কিছু জায়গায় আতশবাজির মাধ্যমে দিনটি উদ্যাপন করে রাজধানীবাসী। একই দিন রাজধানীতে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ শোভাযাত্রা বের করে। এতে ডিএমপির ৫০টি থানার কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা অংশ নেন। সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল ও মোটরকার সহযোগে বের করা শোভাযাত্রা বিশেষ নজর কাড়ে পথচারীদের। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণিতে অবস্থিত ডিএমপি সদর দফতর থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এ সময় আকাশে উড়িয়ে দেয়া হয় রঙিন বেলুন। শোভাযাত্রা শেষে পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম বলেন, আজকের দিনটি বাঙালীর জন্য বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গোটা জাতির আনন্দের সঙ্গে পুলিশও অংশীদার হলো। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, আমরা আজ আরেক ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল স্বপ্ন জয়ের সাক্ষী হলাম। এ সবের বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে দৃশ্যমান হচ্ছে তেমন একটি সেতুর ফ্রেম। সোনারগাঁও হোটেলসংলগ্ন রাস্তার মোড়ে যেখানে সার্ক ফোয়ারাটি অবস্থিত তার পাশেও নতুন করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতুর দুটি স্প্যান। স্প্যানের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সেতু। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এভাবে মূলত সাধারণ মানুষের আবেগটাকেই প্রকাশ করেছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটি ঘটা করেই উদ্যাপন করেছে রাজধানীবাসী। এমন আনন্দ-উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ আরও আসুক। যেন আসে। সবাই নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে থাকবেন।
×