ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩৯ শতাংশ দুর্ঘটনাই বাইকে

সড়ক দুর্ঘটনায় জুনে ৫২৪ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৫ জুলাই ২০২২

সড়ক দুর্ঘটনায় জুনে ৫২৪ জন নিহত

সড়ক দুর্ঘটনা

জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬৭টিএতে নিহত হয়েছেন ৫২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৮২১ জননিহতদের ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকারজুন মাসে ১৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৪ জন

সোমবার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানায়সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেএর আগে মে মাসেও দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি ছিল

মে মাসে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৪ জনের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৮ জন এবং শিশু ৭৩টিআর মোট ৪৬৭টি দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ১৮ শতাংশএছাড়াও বলা হয়, এসব দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২০ দশমিক ৪১ শতাংশযানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, অর্থা ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ

এছাড়া জুন মাসে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ১৬ জন আহত হয়েছেন এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন১৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছেনপ্রতিবেদনে সংগঠনটি জানায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৯টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৪টি আঞ্চলিক সড়কে, ৭২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৫৬টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি সংঘটিত হয়েছে

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছেএ বিভাগে ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত হয়েছেনসিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে১৩টি দুর্ঘটনায় এ বিভাগে ১৪ জন নিহত হয়েছেন

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৪ জন (৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৪ জন (৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ), ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ডাম্পার আরোহী ৩৯ জন (৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, জিপ যাত্রী ১৪ জন (২ দশমিক ৬৭ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিক্সা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১০৬ জন (২০ দশমিক ২২ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, চান্দেরগাড়ি) ১৩ জন (২ দশমিক ৪৮ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিক্সা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৭ জন (৩ দশমিক ২৪ শতাংশ) নিহত হয়েছে

দুর্ঘটনাসমূহের ১০৩টি (২২ দশমিক ০৫ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৮টি (৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি (২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৩৮টি (৮ দশমিক ১৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৪ দশমিক ০৬ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, তেলবাহী ট্যাঙ্কার, প্রিজনভ্যান, সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, এ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পুলিশ পিকআপ, আর্মি ট্রাক ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, থ্রি হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিক্সা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, চান্দের গাড়ি) ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাইসাইকেল, প্যাডেল রিক্সা, প্যাডেল ভ্যান ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (ডাম্পার, ড্রাম ট্রাক, রোড রোলার, ইটভাঙ্গার গাড়ি) ১ দশমিক ১৩ শতাংশ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য চারজন, বিমান বাহিনীর সদস্য একজন, বিজিবি সদস্য তিনজন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক ১৭ জন, চিকিসক দুইজন, পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী দুইজন ও প্রকৌশলী দুইজন, সাংবাদিক তিনজন, আইনজীবী দুইজন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, সমবায় উপ-পরিদর্শক একজন, বিআরডিবি কর্মকর্তা একজন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩২ জন, পোশাক শ্রমিক ছয়জন, ইউপি সদস্য দুইজনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে

প্রতিবেদনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কয়েকটি কারণের কথাও উল্লেখ করা হয়বলা হয়, দুর্ঘটনা হয়ে থাকে মূলত ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি

দুর্ঘটনা কমানোর ১০ দফা সুপারিশ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনতারা দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবেপ্রভৃতি সুপারিশ তুলে ধরে

×