ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু যেভাবে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৪ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু যেভাবে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে

রহিম শেখ ॥ স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও নড়াইলের কালনা সেতু চালু হলে আন্তর্জাতিক রুটে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এই রুটটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ-১) নামে পরিচিত। এএইচ-১ রুটটি বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যশোর-নড়াইল-কালনা সেতু-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা-পদ্মা সেতু-মাওয়া-ঢাকা হয়ে কাঁচপুর-নরসিংদী-শেরপুর-সিলেট দিয়ে তামাবিল পর্যন্ত ৪৯১ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করবে। এতদিন এই রুটের দুটি মিসিং লিংক ছিল। একটি পদ্মা সেতু, অন্যটি নড়াইলের কালনা সেতু। আগামীকাল পদ্মা সেতুর চালুর ফলে এই মিসিং লিংক দূর হবে। এছাড়া ছয় লেনের কালনা সেতু নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বলে কালনা সেতু চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তাই পদ্মা ও কালনা সেতু চালু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে আর কোন বাধা থাকবে না। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, তিনটি রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত হবে। এর মধ্যে দুটি প্রধান রুট এএইচ-১, এএইচ-২ এবং একটি উপ-আঞ্চলিক রুট এএইচ-৪১। এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ) রুট-১’র জাপানের টোকিও থেকে তুরস্ক হয়ে বুলগেরিয়া সীমান্তে পর্যন্ত ২০ হাজার ৫৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। এই রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ যুক্ত হবে। এএইচ-১ রুটটি বাংলাদেশের ৪৯১ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করবে। এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ) রুট-২ এটি ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়নমার, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান হয়ে ইরানের তেহরানের এএইচ-১ রুটের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই রুটে হবে ১৩ হাজার ১৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রুটের মাধ্যমে ১০ দেশ যুক্ত হবে। এটি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে শুরু হয়ে পঞ্চগড়-বেলডাংগা-রংপুর-গোবিন্দগঞ্জ-বগুড়া-হাটিকুমরুল-এলেঙ্গা-কালিয়কৈর-জয়দেবপুর-ঢাকা হয়ে কাঁচপুর-সিলেট দিয়ে তামাবিল পর্যন্ত ৫১২ কিলোমিটার সড়ক বাংলাদেশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এছাড়া উপআঞ্চলিক রুট হিসেবে এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ) ৪১-এ মোংলা বন্দর থেকে শুরু হয়ে খুলনা-যশোর-ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল-কালিয়াকৈর-জয়দেবপুর-ঢাকা-কাঁচপুর-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দিয়ে টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৭৫৪ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করবে। ১৯৯২ সালে বেইজিংয়ে ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ্যান্ড দি প্যাসিফিক (এসকাপ) বৈঠকে এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে ও ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ফেসিলিটেশন সমন্বয়ে ‘এশিয়ান ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ গঠনের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। ২০০১ সালে সিউলের অবকাঠামো কমিটির মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৩ সালের ১৮ নবেম্বর ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এসকাপের ৫৮তম সম্মেলনে ৩২ দেশের মধ্যে এ বিষয়ে একটি আন্তঃরাষ্ট্র সমঝোতা হয়। ২০০৫ সালের ৪ জুলাই সাংহাইতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৩২ দেশের মধ্যে ২৬টি দেশ স্বাক্ষর করে। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই। এশিয়ান হাইওয়েরভুক্তির জন্য ১৯ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এক্ষেত্রে সাব রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি কারিগরি প্রকল্পের আওতায় সব প্রজেক্টের সম্ভাব্য সমীক্ষা ও ডিটেইলড ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু প্রকল্প নির্মাণ কাজ চলছে। আবার কিছু প্রকল্প অর্থ সঙ্কটে কাজ শুরু করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এএইচ-১ রুটভুক্ত এলাকার সড়কগুলো সব পর্যায়ে ৪ লেনের উন্নতি করাসহ জাতীয় মহাসড়কে উন্নয়নের কাজ চলছে। এই রুটেভুক্ত সড়ক জন্য সিলেটের তামাবিল থেকে শুরু করে কাঁচপুর পর্যন্ত ২৮৩ কিলোমিটার মহাসড়কে চারলেন করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেন উন্নতি করা হয়েছে। এই রুটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যা আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর দুইপাড়ে ভায়াডাক্টসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া দুইপাড়ের ৬ লেনের ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এএইচ-২ রুটের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন সড়ক জাতীয় মহাসড়কে উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সেকশনের ৭০ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেন উন্নত করে মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ চলছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর সেকশনের ২৫১ কিলোমিটার সড়ক মহাসড়কে চারলেনে উন্নতিকরণের কাজ চলছে। পঞ্চগড়-রংপুর সেকশনের ১০৬ কিলোমিটার মহাসড়কে ও বাংলাবান্ধা হতে পঞ্চগড় পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়ক মহাসড়কে চারলেনে উন্নতিকরণে এডিবির অর্থায়নে নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে সড়ক ও জনপদ অধিদফতর (সওজ) সূত্র জানায়। এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে কয়েকটি সড়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে এশিয়ান হাইওয়ে একটি। এছাড়া বিবিআইএন, বিমসটেক ও সাসেকসহ আরও কয়েকটি রুটে হয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে পদ্মা ও যমুনা নদী বড় দুটি বাধা ছিল। এই দুটি সেতু যেহেতু হয়ে গেছে। এখন তেমন আর বড় কোন সমস্যা নেই। কালনা সেতু সেপ্টেম্বরে চালু হলে এশিয়ান হাইওয়ের আর কোন মিসিং লিংক থাকবে না। আঞ্চলিক সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিক রুটে যুক্ত হতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ বসে নেই। আমাদের সড়ক মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×