ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপকুলীয় অঞ্চল উন্নয়নের রোল মডেল পদ্মা সেতু

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৩ জুন ২০২২

উপকুলীয় অঞ্চল উন্নয়নের রোল মডেল পদ্মা সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী,বরগুনা ॥ উপকুলীয় অঞ্চল উন্নয়নের রোল মডেল পদ্মা সেতু। সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পরপরই উন্নয়নের জোয়ার বইবে উপকুলীয় অঞ্চলে। অর্থনৈতিক চাকার মুল হাতিয়ার শিল্পকারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন উদ্যোুক্তারা। প্রাধাণ্য পাবে পোশাক কারখানা আবাসন ও পরিবহন খাত। হাতের নাগালে আসবে মৎস্য ভান্ডার খ্যাত বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পায়রা নদীর আহরিত মৎস্য সম্পদ। সেতু উদ্বোধনের প্রতিক্ষায় উপকুলীয় অঞ্চলের অন্তত অর্ধ কোটি মানুষ। উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আনন্দ ততই বাড়ছে। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীতে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে ওই প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগতে পারছে না উদ্যোক্তারা। পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর পরপরই উদ্যোক্তারা উপকুলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে মহা পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিল। তাদের সেই মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর মাত্র ১ দিন বাকী। উপকুলীয় মানুষের যেন তর সয্য হচ্ছে না। সেতু উন্মুক্তের অপেক্ষায় তারা। উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীতে প্রচুর পরিমাণে আবাদি এবং অনাবাদি জমি রয়েছে। রয়েছে বনরাজি, পর্যটন কেন্দ্র সোনাকাটা ইকোপার্ক ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদী। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীর, বিভিন্ন এলাকায় ছোট এবং মাঝারি শিল্প, কল-কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তালতলী আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কোরিয়ার জ্বালানী তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হামদু কোম্পানীসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে এ বৃহত্তর শিল্প কারখানাগুলোর প্রসারে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান জ্বালানী তৈল উৎপাদনকারী হামদু কোম্পানীর ঠিকাদার মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন তাপরাশী। পদ্মা সেতু চালু হলে সেই সমস্যা আর থাকবে না বলে আরো জানান তিনি। উপকুলীয় অঞ্চলে আবাসন ব্যবস্থার বেশ সংঙ্কট রয়েছে। উদ্যোক্তারা আবাসন সংঙ্কট দুর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন বলে জানান ক্রিস্টাল বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশন’র ব্যনবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল ইসলাম। পদ্মা বহুমুখী সেতু খুলে দিয়ে উপকুলীয় অঞ্চলে আবাসন ব্যদবসায় অভুতপুর্ব সাফল্যু আসবে বলে তিনি আরো বলেন। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে ওই মৎস্য সম্পদ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে রপ্তানী কম হতো। এখন হাতের মুঠোয়ে এসে গেছে মৎস্য সম্পদের বিনিয়োগ। আমতলী-তালতলী উপজেলায় ১৪ হাজার ৬’শ ১০ জন পেশাজীবী জেলে রয়েছে। জেলেদের আহরিত মাছ প্রক্রিয়াজাত করনের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে মাছের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ন্যয্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হতো শ্রমজীবী জেলেরা। পদ্মা সেতু চালু হলে সেই অবস্থা আর থাকবে না। এতে অর্জিত হবে শত শত কোটি টাকা। লোকসানের ঘানি টানতে হবে না জেলে এবং ব্যবসায়ীদের। পরিবহন খাত সহজতর হওয়ায় ভোক্তারা গুণগত মানের মাছ খেতে পারবে। মৎস্য চাষে উদ্যোগী হবে লক্ষ লক্ষ বেকার এমনটাই জানান তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম। তিনি আরো বলেন, তালতলীর সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন শুটকি পল¬ীর শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণ আরো সম্প্রসারিত হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই উপকুলীয় অঞ্চলে অর্থনীতির দ্বার উন্মুক্ত হবে। দ্রুত গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা। তালতলীতে প্রসারিত হবে পোশাক কারখানা ও আবাসন ব্য বসা। গড়ে উঠবে মৎস্য অবতরন কেন্দ্র। সাগর ও পায়রা নদীর গলদা ও বাগদা চিংড়ি রপ্তানী সহজতর হওয়ার পাশাপাশি গড়ে উঠবে মৎস্য খামার এমনটাই দাবী করেছেন, তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান মুহা তৌফিকউজ্জামান তনু । মৎস্য খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি খাতের ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হবে। দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পরে আর কম মুল্যে ধান ও কৃষিজাত পন্য বিক্রি করতে হবে না। কৃষকরা নিজেরাই রপ্তানী করতে পারতে নিজেদের উৎপাদিত কৃষি পন্য। ন্যয্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না কৃষকরা। এমনটাই দাবী করেছেন চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম রাসেল ও নজরুল ইসলাম। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীতে কৃষি ক্ষেতে আমুল পরিবর্তন হবে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল অনায়াসে কৃষকরা বাজারজাত করতে পারবেন। আর ন্যয্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না তারা। পরিবহন খাতকে ঘিরেই এতো উন্নয়ন। উপকুলীয় অঞ্চলে যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল পরিবহন গাড়ী। এসি নন এসিসহ বিমানের ছোয়া পাচ্ছেন সড়ক পথে। ইতিমধ্যেগ অর্ধ শতাধিক পরিবহন মালিকরা গাড়ী ছাড়ায় অপেক্ষায় রয়েছেন। সেতু উদ্বোধনের দিনই ঢাকার গাড়ী যাবে আমতলী হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। গ্রীন সেন্ট মার্টিন এক্সপ্রেস কাউন্টার মাষ্টার মোঃ জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন বিমানের ছোয়া পাবে সড়ক পথে। পদ্মা সেতুর চালুর আগেই শ্যামলী গ্রীন লাইন ওয়েলকাম এক্সপ্রেস হামিম ইউনিক প্রচেষ্টা ও ইলিশসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক পরিবহন মালিক বিলাসবহুল কয়েক’শত গাড়ী ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেতু চালুর সাথে সাথেই গাড়ী চলবে পদ্মা সেতু পাড় হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে। আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, উপকুলীয় অঞ্চলকে ঘিরেই যত উন্নয়ন। কিন্তু আমতলীই ব্যবসা বানিজ্যের মুল ঘাটি। এমন সম্ভাবনার কথা ভেবেই আমতলীতে ইতিমধ্যে অন্তত ১৫ টি বে-সরকারী ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। তিনি আরো বলেন প্রতিদিন সম্প্রসারিত হবে শিল্প কারখানা।
×