ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় সমঝোতা

নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার ইমরানের

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২৫ মে ২০২২

নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার ইমরানের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রথম বৈঠকেই সফল হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বৈঠকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারে সম্মতি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও অঙ্গীকার করেছেন ইমরান। মঙ্গলবার রাতে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজাল খানের ছেলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এবং তাঁর বোন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত বৈঠকটি চলে। বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু দিনশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে ভুল করে না। আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তাই হতে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজাল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান তাঁর প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল ২৬ মে নির্বাচন কমিশনের পূর্বনির্ধারিত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। শেষ দিন তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ত্যাগী পরিবারের সদস্য ইমরান ও সীমা। তাঁরা দুই ভাই বোন আজকে এসেছিলেন। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তাদের বুঝিয়েছি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে। ইমরান আমাদের কথা দিয়েছে সে দলের সিদ্ধান্তকে মেনে ২৫ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলাম, তাদের প্রাপ্য সম্মানটা দিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে। তারা দলের নীতি-আদর্শের জন্য যে কোন ছাড় দেবে। কুসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দৃষ্টান্তকারী নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তবে বৈঠকের ব্যাপারে কোন কথা বলেননি বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরান। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান দলের কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। তবে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় ভোটের সমীকরণ জটিল হয়ে পড়ে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই দুটি বলয়ে বিভক্ত; এক অংশের নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল খান, অপরপক্ষে রয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। ইমরান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত আফজল খানের ছেলে; আর নৌকার প্রার্থী রিফাত কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছিলেন আফজল খান নিজেই। সেবার তিনি বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর কাছে হেরে যান। এরপর ২০১৭ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হন আফজল খানের মেয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সে নির্বাচনেও সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সীমা পান ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। এরপর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগ বাহাউদ্দিন বাহারকে মনোনয়ন দিলে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আফজল খানের ছেলে ইমরান। সেই নির্বাচনে জয়ী হন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। দীর্ঘদিনের এই দলীয় বিভেদ এবারের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা, সমঝোতা হলেও দুপক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করলে সিটি কর্পোরেশন জয় করা কঠিন হবে এবং ‘পুরনো সংকটের বৃত্তেই’ আটকে থাকবে দল। যার সুবিধা নেবে তৃতীয় কোন প্রার্থী। আগামী ১৫ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ১০৫ কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে।॥॥
×