ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৫ মে ২০২২

সতর্ক থাকতে হবে

বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টিকারী কোভিড-১৯ এর ভয়ঙ্কর ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই এবার হানা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স। ভাইরাস বাহিত ব্যাধিটি প্রায় গুটিবসন্ত বা জলবসন্তের মতো সংক্রমক ও ছোঁয়াচে। ছড়িয়ে পড়ে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে। প্রধানত আফ্রিকায় এর উৎপত্তি হলেও অধুনা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের কয়েকটি দেশে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে সেসব দেশে ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে বাড়তি ও আগাম সতর্কতা। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের প্রায় সব বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে এ বিষয়ে সতর্কতা জারিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতালগুলো। এ রোগের উপসর্গবাহিত কোন রোগীর সন্ধান পেলে জরুরী ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে আইইডিসিআরের সঙ্গে। প্রধানত বানরবাহিত হলেও এই রোগ ইঁদুর, বাদুড়, কাঠবিড়ালী এমনকি সংক্রমিত রোগী এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা, ওষুধ বা টিকা নেই। তবে জলবসন্তের টিকা নেয়া থাকলে তা ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। আশার কথা এই যে, রোগটি প্রাণঘাতী নয়। তবে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় অবশ্যই। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা যুদ্ধ করার জন্য বিশ্বের কোন দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি করোনার আঁতুরঘর বলে খ্যাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানও নয়। অভিযোগ আছে যে, চীনে যখন এর প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে, তখন সে দেশের সরকার অনেক দিন গোপন রেখেছিল এর ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা। পরে তা যখন আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, তখনই তা ছড়িয়ে পড়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়ায়। মজার বিষয় হলো চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পরাশক্তি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উভয় দিক থেকেই। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গেও। সুতরাং করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগেনি। তবে বিশ্ববাসী এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষা কোনটাই গড়ে তুলতে পারেনি যথাসময়ে। কেননা, করোনা একটি ভাইরাস- জড় ও জীব জগতের মাঝামাঝি একটি বস্তু, যা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র পাল্টে ফেলে আক্রমণ করে মানুষ ও জীব জগতকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর অগ্রসর হলেও প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসের এই বিচিত্র চরিত্রের জন্য অদ্যাবধি কার্যকর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। যেমন- ফ্লু, প্রচলিত অর্থে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক নেই। অনুরূপ প্রত্যক্ষ করা যায় মার্স, সার্স, জিকা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার দিন দিন বেড়েছে এবং রূপ নিয়েছে হন্তারক অতিমারীতে। শেষ পর্যন্ত টিকাও আবিষ্কার হয়েছে এবং করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে এমনটি হবে না বলেই প্রত্যাশা। তবু সতর্কতা হিসেবে সবাইকে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
×