ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে খোলা আকাশের নিচে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ পুরাতন গাড়ি

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৪ মে ২০২২

শেরপুরে খোলা আকাশের নিচে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ পুরাতন গাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ দীর্ঘদিন যাবত অযত্ন-অবহেলায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে শেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪টি পুরাতন গাড়ি। গাড়িগুলো একই জায়গায় পড়ে থাকায় একদিকে যেমন একেবারেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে চুরি হয়ে যাচ্ছে ওইসব গাড়ির যন্ত্রপাতি। ওইসব অকেজো গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি আর বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার আওতায় নেওয়ার প্রয়োজন হলেও এ বিষয়ে একেবারেই উদাসিন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, সরকারী অকেজো গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো নিলামে বিক্রির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জানা যায়, শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন থেকে পড়ে আছে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স, জিপ ও মাইক্রোবাস। গাড়িগুলো সামান্য নষ্ট হওয়ার পর আর মেরামত না করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা হাসপাতালের যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় মাটিতে পড়ে থাকা গাড়িগুলো এখন প্রায় অকেজো। ওইসব যানবাহনের কোনটি ১৫ বছর, আবার কোনটি ৮-১০ বছর ধরে পড়ে আছে। এর মধ্যে বিদেশি সরকার ও সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ৩ টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স রহস্যজনক কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ৪ বছর ধরে গাড়ি ৩টির জায়গা হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের এক কোণায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিমত, ১৪টি গাড়ির মধ্যে ৪-৫টি গাড়ি এখনও সংস্কার করার মত রয়েছে। আর বাকিগুলো নিলামে বিক্রি হলেও কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো। সরেজমিনে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় কয়েকটি গাড়ির ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতিও নেই গাড়িতে। সুযোগ বুঝে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে বা ভিন্নভাবে খোয়া গেছে। এখন শুধু গাড়ির বডিগুলো পড়ে আছে। এখানকার পাহারাদাররাও জানে না কিভাবে খোয়া গেছে যন্ত্রপাতিগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন পাহারাদার জানান, বেশিরভাগ গাড়িই ১৪/১৫ বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে। সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো তো এখন আর নিলামে তোলার অবস্থাতেও নেই। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আবুল হোসেন বলেন, এই হাসপাতালে সরকারী মাত্র একটা অ্যাম্বুলেন্স। অথচ হাসপাতালের পিছনে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো ঠিকঠাক করে চালালেও তো রোগীরা সেবা পেতো। আব্দুর রহিম নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগী ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে হয়। অথচ নষ্টগাড়িগুলো ঠিক করলে আমরা কম খরচে রোগী নিয়ে যেতে পারতাম। সরকারী সম্পদগুলো এমনভাবে নষ্ট হচ্ছে, যেন দেখার কেউ নেই। একই কথা জানান লিয়াকত আলী, আহম্মদ উদ্দিন, আসমা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। অন্যদিকে হাসপাতাল অঙ্গনের বাইরে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি গাড়ি ঠিক না করে, তাহলে এসব গাড়ি ক্রয় করার জন্য অনেকেই রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিলাম ডেকে বিক্রি না করায় দিন দিন গাড়িগুলো আরও অকেজো হয়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকার গাড়িগুলো যত্রতত্র ফেলে রেখে সরকারের ক্ষতি না করে দ্রুত অকেজো গাড়িগুলো নিলামে তুলে বিক্রি এবং বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার আওতায় আনার দাবি জানান তারা। এ ব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারী গাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল ও সময়সাপেক্ষ। আর গাড়িগুলো স্থানীয়ভাবে নিলামে দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। তাই গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই ওইসব গাড়ির তালিকা তৈরি সাপেক্ষে নিলামে বিক্রির অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই সেগুলো নিলামে তুলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
×