ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ আব্দুল্লাহ্ ইয়াছিন

কণ্ঠ অনুকরণে সফলতা

প্রকাশিত: ০০:০৭, ২৪ মে ২০২২

কণ্ঠ অনুকরণে সফলতা

জনপ্রিয় বিভিন্ন কার্টুনের কণ্ঠ নকল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ঐতিহ্য। পুরো নাম ঐতিহ্য অথৈ রায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কণ্ঠ নকলে দক্ষ মেয়ে’ নামেই অধিক পরিচিত সে। বাবা ডাঃ তরুণ কুমার রায় ও সহযোগী অধ্যাপিকা মা ঝর্ণা মজুমদারের দুই সন্তানের মাঝে ঐতিহ্য অথৈ রায় সবার বড়। তার জন্ম মাদারীপুর সদরে হলেও শিক্ষিকা মায়ের চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে বরিশালের শান্ত পরিবেশে। বর্তমানে ঐতিহ্য মাদারীপুরের ডনোভান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়ালেখার পাশাপাশি বহুগুণে গুণান্বিত সে। জড়িত আছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও। বর্তমানে জনপ্রিয় কার্টুন মিনা-রাজু, হ্যারিপটার, ডোরেমন, নবিতা, সিজুকা, পাওয়ার পাফ গার্লস ও সিসিমপুরের ইকরিসহ অনেক চরিত্রের কণ্ঠ নকল বা মিমিক্রি করেই বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঐতিহ্য অথৈ রায়। চরিত্রগুলোর সঙ্গে ঐতিহ্য যেন একাত্ম হয়ে গেছে। মিমিক্রির প্রতি আগ্রহ কেমনে জন্মাল জানতে চাইলে ঐতিহ্য জানায়-ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সদস্য, পরিচিতজন ও প্রিয় কার্টুন ছবির কণ্ঠ নকল করতে ভাল লাগত তার। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মিমিক্রি করা কখনও শেখেনি সে বরং সহজাত বৈশিষ্ট্য ও ভাল লাগা থেকেই সে মিমিক্রি করত। পরিচিতজনরা তার মিমিক্রিতে বেশ মজা পেত যা তাকে অনুপ্রেরণা জোগাত। ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারীর কারণে দেশে লকডাউন দিল তখন সবার মতো ঘরবন্দী সময় কাটছিল ঐতিহ্য অথৈ রায়ের। অবসর সময় কাটাতে শখের বশে একটি অনলাইন সাংস্কৃতিক গ্রুপে কিছু কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রি ভিডিও করে পোস্ট করে সে। সেখানে অনেক সাড়া পায়। পরে একটি সাংস্কৃতিক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হলে সেটি লাখ লাখ মানুষ দেখে এবং একপর্যায়ে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর বেশ কয়েকটি চ্যানেল তাকে নিয়ে রিপোর্ট করলে মানুষ তাকে চিনতে শুরু করে। ধীরে ধীরে দর্শক তার ভয়েস আর্টটাকেও পছন্দ করতে শুরু করে। তাদের অনুপ্রেরণায় ফেসবুক ও ইউটিউবে নিজের নামে পেজ খুলে ঐতিহ্য অথৈ রায়। মিমিক্রির পাশাপাশি ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করছে সে। কথা সাহিত্যিক আবু ইসহাক রচিত ‘ময়না কেন কয় না কথা’ অবলম্বনে পরিচালক উজ্জ্বল কুমারের নির্মিত বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ময়না’য় নাম ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছে ঐতিহ্য অথৈ রায়। যা ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে। ভয়েস আর্ট বা মিমিক্রি ছাড়াও আবৃত্তি, গান, চিত্রাঙ্কনে সমান আগ্রহ রয়েছে তার। সে আগ্রহ থেকে ৮ বছর বয়সে ক্লাসিক্যালি সঙ্গীত শিক্ষা রপ্ত করে। ইতোমধ্যে শিল্পকলা একাডেমি থেকে চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা সপ্তাহ, জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এ ছাড়াও ২০১৯ সালে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হওয়ার গৌরব অর্জন করে ঐতিহ্য অথৈ রায়। ছবি আকা, কণ্ঠাভিনয়, গান তৈরি, ভিডিওগ্রাফি এবং এডিটিংয়ের মতো সৃজনশীল সৃষ্টিশীল কাজ করতে তার ভাল লাগে। এসব তার শখও বটে। খেলাধুলায়ও পারদর্শী সে। তার প্রিয় খেলা দাবা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দাবা খেলায় অংশ নিয়ে একাধিকবার বিজয়ী হয়েছে সে। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জানায়, তার জীবনের এখনও অনেকটা পথ বাকি। এই ছোট্ট সময়ের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি যদি বলতে হয় তবে তা হলো মানুষের ভালবাসা। স্কুলে গেলে অনেকেই তাকে ঘিরে ধরে, কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রি শোনার জন্য, ছোট ছোট বাচ্চারা কার্টুনের কণ্ঠ শুনতে চায়, রাস্তাঘাটে আবার অনেকে তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি না মিমিক্রি কর? স্কুলের নতুন শিক্ষকদের অনেকেই তাকে চেনেন মিমিক্রির সুবাদে আবার অনেকে তার কনটেন্টও দেখেন। একদিন এক নতুন শিক্ষক প্রথম তাদের ক্লাসে এলে, তাকে দেখেই বলেন, ‘তোমাকে তো আমি চিনি, তুমি মিমিক্রি কর। তখন সে অবাক হয় আবার তার কাজ মানুষ দেখে, ভালবাসে, মূল্য দেয় এটা জানতে পেরে তার ভাল লাগে। কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এভাবে বেঁচে থাকতে চায় ঐতিহ্য। ঐতিহ্য অথৈ রায় বড় হয়ে কি হতে চায় জানতে চাইলে বলে- বড় হয়ে আমি একজন চিকিৎসক হতে চাই, পাশাপাশি একজন ভয়েস এ্যাকট্রেস হিসেবেও কাজ করতে চাই। যেন চিকিৎসা সেবা দিয়ে একজন মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও আমার শিল্পকর্ম দিয়ে মানসিকভাবে আনন্দ দিতে পারি।
×