ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগ কুশিয়ারার পানি বাড়ায় নতুন এলাকা প্লাবিত

সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৪ মে ২০২২

সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ নগরীর অধিকাংশ এলাকা থেকে বানের পানি নেমে গেছে। নদী তীরবর্তী কিছু নিচু এলাকায় এখনও কিছুটা পনি রয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করলেও কিছু এলাকায় নতুন করে পানি বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। গত ৩ দিন যাবত বৃষ্টির মাত্রা কম রয়েছে। কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে উপজেলার ভেলকুনা, গয়াসী, বাঘমারা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ববাজার, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। এদিকে, ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ববাজারে পানি উঠার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্যায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার জনসাধারণ। কুশিয়ারা নদীর পানি সোমবার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ২.২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ০.২৮ ও আমলসিদ পয়েন্টে ০.৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। সিলেটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরীকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনও পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বন্যায় নগরীর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ, তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ কমিটির যৌথ প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সিলেটের এবারের বন্যায় সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদিন ধরে পানি কমে এলেও এখনও অনেক সড়ক পানির নিচে রয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করত পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে সিসিক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যার পানি নামলেও এসব সড়ক সংস্কারে লাগবে প্রচুর সময়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডুবে যাওয়া সড়কের মধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় আড়াই শ’ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন আটটি সড়কের ৫৫ কিলোমিটার বন্যাপ্লাবিত। এর মধ্যে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াই শ’ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানি উঠে গেছে। এসব সড়কের অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় এসব সড়ক অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, পানি নামলেই দ্রুততম সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা হবে। অন্যদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির আর খুব একটা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে যাবে। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষি ও মৎস্য চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ। আকস্মিক বন্যায় বোরো ফসল, আউশের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুরমার পানি কিছুটা কমলেও বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ও দশঘর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১২টি ঘর, ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, সুরমার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রামের ১৬টি পরিবারের বসতভিটা। উপজেলার শতাধিক গ্রাম, চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ বসতঘর, অসংখ্য রাস্তাঘাট, ৬৯টি প্রাইমারী, ১৫টি হাইস্কুল ও ১০টি মাদ্রাসা বানের পনিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি মানুষ। বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে নগরীর কুশিঘাট বাজার, বুরহানাবাদ এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এম এন নবীর, সাধারণ সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র মোঃ শাহজাহান, ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ। রওশন এরশাদ এমপির পক্ষে ত্রাণ বিতরণ ॥ বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপির পক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নবগঠিত ৩৩ নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর, বাইপাস সিদ্দিক নগর, ছড়ার পাড়, বহর এবং জৈন্তাপুরের চিকনাগুলসহ কয়েকটি ইউনিয়নে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া মানবসেবায় নিবেদিত সংগঠন সিলেট বিবেক এর পক্ষ থেকে রবিবার বিকেলে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের মোটরঘাট এলাকার কুমারপাড়ায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। মানবাধিকার সোসাইটি সিলেট মহানগর শাখার পক্ষ থেকে ও সোনালি স্বপ্ন বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় নগরীর মাছিমপুর এলাকায় পানিবন্দী মানুষদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাপীড়িত অর্ধশতাধিক মানুষের মধ্যে ব্রেড, বিশুদ্ধ পানি, চিড়া সহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়াামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে কামালবাজারে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ আহমেদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ উপস্থিত ছিলেন। নবীগঞ্জে বন্যার পানি প্রবেশ করছে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের গালিমপুর গ্রামের বেশকিছু বাড়িঘর। কুশিয়ারা নদীতে সিলেট অংশের শেরপুরে বাঁধ না থাকায় ওই গ্রামে পানি প্রবেশ করে। হবিগঞ্জ অংশে আর মাত্র কয়েক ইঞ্চি পানি বাড়লেই লোকালয় প্লাবিত হবে। এ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর, পারকুল ও ফাদুল্লাপুরসহ কয়েকটি গ্রাম। এছাড়া জেলার নদীগুলোর পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। শাহজাদপুরের রাউতারা রিং বাঁধ হুমকির মুখে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নিমাইচড়া রিং বাঁধ হুমকির মুখে। পানি বৃদ্ধির ফলে যে কোন সময় বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা রয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ৩টি জেলার হাজার হাজার হেক্টর ধান তলিয়ে যাবে এ কারণে বাঁধে অতিরিক্ত পাহারা বসানো হয়েছে। প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বাঁধে কোটি কোটি ব্যয় করে। সেই সঙ্গে চলে পুকুর চুরি। শাহজাদপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বাঘাবাড়ী নিমাইচড়া রিং বাঁধ অবস্থিত। প্রায় ১২ শ’ মিটার লম্বা এই বাঁধে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। সুনামগঞ্জে কাঁচা ও আধাপাকা সড়কের বেহালদশা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও হাওড়াঞ্চলের গ্রামগুলোতে দুর্ভোগ বেড়েছে। কাঁচা ও আধাপাকা সড়কগুলের বেহালদশা। সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন চলছে না, আবার পায়ে হেঁটেও চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। তাতে দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। এখনও রয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি পুরোপুরি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও রাস্তাঘাট সংস্কার করা যাচ্ছে না শীঘ্রই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।
×