ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্তত ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া যায়

প্রভাবশালীদের দখলে উত্তরবঙ্গের অর্ধেক খাস জমি

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৪ মে ২০২২

প্রভাবশালীদের দখলে উত্তরবঙ্গের অর্ধেক খাস জমি

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গে যে সরকারী খাস ভূমি আছে তা উদ্ধার করে অন্তত ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের বড় একটি অংশ নদী ভাঙ্গনের থাবায় পড়ে ভাসমান। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীতীর ও চরগ্রামে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে অনেক পরিবার বসতভিটা জমিজিরাত হারায়। পুরনো ভূমিহীনের সঙ্গে তারা নতুন যুক্ত হয়। বেড়ে যায় ভূমিহীনের সংখ্যা। সরকারী হিসাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরকারী খাস ভূমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২০ লাখ একর। যার অর্ধেকেরও বেশি প্রভাবশালীরা বহু বছর ধরে অবৈধ দখলে রেখেছে। তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধ দখলে থাকা খাস ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। এটা রুটিনি ওয়ার্ক। কখনও মামলার কারণে উদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরে আর উদ্ধার হয় না। অধিকাংশ সময়ে অবৈধ খাস ভূমি উদ্ধারে জোরালো কোন উদ্যোগ নেয় না। ফলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না। খোঁজখবর করে জানা যায়, ভূমি ও জরিপ রেকর্ড অধিদফতরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের ‘নিবির সম্পর্ক’ আছে। কাগজে টেম্পারসহ তাদের বিরুদ্ধে ‘নয়ছয়’ করার অভিযোগও পাওয়া যায়। খাস ভূমির অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আছে, বড় ব্যবসায়ী, মহাজন, জোতদার, হাউজিং ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, বড় ঠিকাদার ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উঠতি ধনী। এই প্রভাবশালীরা জাল দলিল করে, ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে খাস ভূমি নিজেদের নামে নামজারি করে ভোগ দখল করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া খাস ভূমি থেকে ভূমিহীনদের বিতারিত করে দখল নেয়া হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির ধারাবর্ষা চর, শেরপুর, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলাসহ কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় খাস ভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৯২ হাজার ৯শ’ ৮২ একর। এর মধ্যে অকৃষি ভূমি ১ লাখ ৮ হাজার ৯শ’ ৮৩ একর। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় খাসভূমির পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ২শ’ ৭৩ একর। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৮শ’ ১৫ একর অকৃষি। দুই বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাস ভূমি রাজশাহী বিভাগে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ বলছেÑ সরকার ইচ্ছা করলেই এইসব খাসভূমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। সরকার খাস ভূমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলে। এ ধরনের আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিটি জেলায় আছে। যেখানে আশ্রয়ণের আকার অনুযায়ী প্রতিটিতে ৩০ থেকে ৫০ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। আশ্রয়ণের মধ্যে পুকুর ও চাষাবাদের ভূমি দেয়া হয়। ভূমিহীনদের কর্মজীবী করে তোলার ব্যবস্থা থাকে। বগুড়া অঞ্চলে খাস ভূমির পাশাপাশি নদী ভূমিও দখল করা হচ্ছে। বগুড়া নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া এখন শুকনো প্রায়। প্রভাবশালীরা নদী ভূমির ভেতরে বালি ফেলে দখল করে অবকাঠামো স্থাপনা গড়ে তুলছে। বগুড়া জেলা প্রশাসন গেল প্রায় দশ বছরে কয়েক দফা নদী ভূমি দখলকারীদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি। ক’বছর আছে নদী ভূমি দখলকারীদের একটি তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কোন কারণে এই উদ্যোগেও ভাটা পড়ে। দখলকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ্ ানিতে পারেনি প্রশাসন। খাস ভূমি দখলদাররা দখলের পরই ভূমির আকৃতি পাল্টে ফেলে। কেউ আবাদী জমিতে গড়ে তোলে অবকাঠামো স্থাপনা। কেউ স্থাপন করে শিল্প কারখানা। কেউ মাটি কেটে বানায় পুকুর। সেখানে করে মাছের চাষ।
×