ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২৪ মে ২০২২

স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি

স্বর্ণের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। স্বর্ণের প্রতি বিশেষ করে নারীর রয়েছে এক অদম্য আকর্ষণ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আদিকাল থেকেই গহনা হিসেবে স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মূল্যবান ধাতু হিসেবে এর সংরক্ষণ রীতিও প্রাচীন। স্বর্ণের দখল নিয়ে বিশে^র অনেক দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছে। স্বর্ণের প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের কারণ হিসেবে অনেক সমাজে নানা মিথ চালু রয়েছে। মূল্যবান এই ধাতুটির প্রতি মানুষের আগ্রহের কারণে প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত এটি আন্তর্জাতিক বিনিময় মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম এখন ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ভাল মানের স্বর্ণের (২২ ক্যারেট) বর্তমান মূল্য প্রতিভরি ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। সর্বশেষ রবিবার ভরিপ্রতি ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এই মূল্য। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্বর্ণ এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। স্বর্ণের গ্রাহক মূলত দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণী। বিলাসিতার জন্য তারা স্বর্ণ ও ডায়মন্ড কিনে থাকেন। অনেকে সঞ্চয় হিসেবেও মজুদ করেন স্বর্ণ। সঞ্চয় হিসেবে স্বর্ণ কিনে রাখার বাস্তব কোন কারণ নেই। ক্রয়কৃত স্বর্ণের গহনা বিক্রি করতে গেলে খাদ হিসাবে মেশানো একটি বড় অংশ বাদ দেয়া হয়। এতে সঞ্চয়কারীকে মোটা অঙ্কের টাকার আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। এরপরও সামর্থ্যবানরা স্বর্ণ কিনে থাকেন। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের স্বর্ণ ক্রয় এবং পরিধান বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে অনেক আগে। সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পারিবারিক কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখনও স্বর্ণ কিনতে বাধ্য হয়। ছেলেমেয়ের বিয়েতে স্বর্ণের গহনা দেয়ার রেওয়াজ চলে এসেছে বহুদিন থেকে। এই রেওয়াজ রক্ষা করতে মধ্যবিত্তদের যেতে হয় স্বর্ণের বাজারে। এছাড়াও আত্মীয়-পরিজনের বিয়ে কিংবা আচার অনুষ্ঠানে মান রক্ষার জন্য অনেকে স্বর্ণ কিনতে বাধ্য হন। মধ্যবিত্তের স্বর্ণ ক্রয় দুঃসহ হয়ে গেছে অনেক আগে। সীমিত আয়ের মানুষ পরিবারের দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে স্বর্ণ কিনতে বাধ্য হয়। সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে যাবে। নিম্নবিত্ত মানুষ এখন স্বর্ণ থেকে অনেক দূরে। ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণই ব্যাখ্যা করেন। এই কারণের সঙ্গে ক্রেতাদের কোন সম্পর্ক নেই। যারা বাধ্য হয়ে স্বর্ণ কেনেন, তাদের কাছে এই যুক্তির কোন অর্থই হয় না। তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়, পকেট থেকে বাড়তি অর্থ খরচ হয়ে যাওয়া। সম্প্রতি কয়েক দফায় বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সর্বশেষ স্বর্ণের দাম বাড়ার মাত্র ৫ দিন আগে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। তখন কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। দুই দফায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে ছয় হাজার টাকার ওপরে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার স্বর্ণের দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই যাচাই করে দেখতে হবে।
×