ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিতে শ্রমিক সঙ্কট

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২৪ মে ২০২২

কৃষিতে শ্রমিক সঙ্কট

বর্তমানে সারাদেশে চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। এবারে দেশের সুবিস্তৃত হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক পাহাড়ী ঢল ও অতি বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে অকাল বন্যা। ভঙ্গুর হাওড় রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে অকস্মাৎ তলিয়ে গেছে অথবা অর্ধমগ্ন হয়েছে কৃষকের স্বপ্নÑ অর্ধপক্ব বোরো ধান। ফলে, সেসব আগাম কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছে কৃষক। এ সময়ে তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। পানিতে তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান কাটতে যতসংখ্যক শ্রমিক দরকার, তা পাওয়া যায়নি কোথাও। গত কয়েক বছরে উন্নত জীবন ও বেশি অর্থ আয়ের আশায় শহরমুখী হয়েছে জন¯্রােত। ফলে, স্বভাবতই কৃষিতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। সারাবছর নিয়মিত আয়ের সুযোগ না থাকার ফলেও কৃষিতে আগ্রহ হারিয়েছে তরুণ সমাজ। এর ওপর ঘূর্ণিঝড় অশনির আঘাতে প্রায় সারাদেশেই প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক স্থানেই আধাপাকা ধান তলিয়ে গেছে পানিতে। ঝড়ো বাতাসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে অর্ধপক্ব সোনালি ধান। রাতারাতি সেসব কেটে ফেলা দরকার। কিন্তু চাহিদা অনুপাতে শ্রমিক কোথায়? বর্তমানে দৈনিক ১২-১৫ শ’ টাকা মজুরি দিয়েও একজন শ্রমিক পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও এত মজুরি দিয়ে ধান বিক্রি করে কৃষকের লাভ প্রায় থাকে না বললেই চলে। বিরূপ আবহাওয়ায় ফলনও এবার কিছু কম। গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সারা দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে দিয়েছেন কৃষকের। এবার অনুরূপ রাজনৈতিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না এখনও। এমতাবস্থায় সার্বিকভাবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ তথা কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের বহুমুখী ব্যবহার জরুরী ও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কৃষি অদ্যাবধি বাংলাদেশের জীবনজীবিকা ও অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তবে বর্তমানে কৃষিকাজে উৎসাহী তথা কৃষিশ্রমিক পাওয়া রীতিমতো দুর্লভ হয়ে উঠেছে। বোরোর বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না সহজে। পাওয়া গেলেও একজন শ্রমিকের মজুরি কমপক্ষে বারো শ’ টাকা। অন্যদিকে বর্তমানে বাজারে এক মণ ধানের দাম বড় জোর ৭৫০-৮০০ টাকা। ধানের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সে অবস্থায় কৃষকের মাথায় হাত। অথচ প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ সম্পন্ন হলে ধানবীজ, চারা রোপণসহ সার ও কীটনাশক ছিটানো, নিড়ানি, সর্বোপরি ধান কাটা, মাড়াইসহ শুকানো এমনকি সরাসরি সাইলোতে পাঠানোÑ সবই খুব সহজে করা সম্ভব আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। কৃষিতে প্রতিবছর কমবেশি ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকে বিবিধ প্রণোদনা খাতে। তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে কৃষির যান্ত্রিকীকরণের কাজে। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার এর সহজ সমাধান হতে পারে। এ যন্ত্রের সাহায্যে কম জনবলে স্বল্প সময়ে কাটাই-মাড়াইয়ের ধান বস্তায় ভরে খড় আলাদা করা যায়। সরকার এর জন্য সহজ শর্তে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণও দিচ্ছে কৃষকদের। উল্লেখ করা আবশ্যক, এই কাজটি শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। তবে এর সার্বিক সুফল পেতে হলে টুকরো টুকরো জমির একত্রীকরণ অত্যাবশ্যক। সমবায় প্রথা এক্ষেত্রে সুফলদায়ক হতে পারে। এর পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলের আধুনিক বিপণন ব্যবস্থাও জরুরী।
×