ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২৩ মে ২০২২

জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাটোরের সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এছাড়া ওয়ার্ডের শয্যা সংকটের রোগীরা অপরিছন্ন পরিবেশে বারান্দা কিংবা মেঝেতে থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সময় মত পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসকদের। প্রয়োজনীয় ঔষধ পাচ্ছেন না অনেক রোগী। এই ধরণের নড়বড়ে অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে কিছুটা অনিয়ম হলেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিষ্ট দিয়ে চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই ৩৬জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগি ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখছেন। তবে শয্যা সংকটই বেশি। জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩’শ রোগীকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যান্তরে এক’শ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে দুই’শ জন। পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে কাটা ছেড়া ও অপারেশনের কাজ। রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করে। তাই বেলা ১২টার পরে আর কোনো পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। সদর উপজেলার দস্তানাবাদ থেকে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া জানান, সকাল আটটা থেকে ৬ মাসের শিশুকে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বসে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি। নলডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর থেকে আসা মারিয়া বেগম জানান, প্রাইভেটে চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই ৫টাকায় টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছি। তিন ঘন্টা পার হলেও দেখা নাই চিকিৎসকের। হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে আসা কাদের আলী জানান, চিকিৎসক ভিতরে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে আলাপ করছেন। আর মাঝে মধ্যে একজন করে রোগী দেখছেন। সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে রবিবার সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। সকল সেবা ঠিক মতো দিলেও রাইচ স্যালাইন ও বায়োকিট নামে দুটি ওষুধ বাহির থেকে কিনেছেন। শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ জানান, যে সকল ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। এছাড়া ওষুধের মজুদ আছে। ওয়ার্ডে ১৪ শয্যার বিপরীতে রোগি ভর্তি আছে ২৪ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬জন শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত সাত দিনে ১১৪জন ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও ফার্মেসী বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা জানান, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগীদের কম করে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদা মতো দেয়া হবে। হাসপাতাল লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম জয় কুমার জানান, পুরাতন ব্লেড, কাছি ও ছেনি দিয়ে লাশের কাটা ছেড়া করতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে। নতুন যন্ত্রপাতির জন্য উর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ পাওয়া যায়নি। পেলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক সুমনা সরকার জানান, সকাল আটটায় হাসপাতালে এসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে হয়। তার পরে নতুন রোগীর সমস্যা দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে করে বহিঃ বিভাগের চেম্বারে বসতে দেরি হয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে সঠিক সময়ে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ মোমিন জানান, জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩’শ রোগিকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যান্তরে এক’শ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগি ভর্তি থাকে দুই’শ জন। বাধ্য হয়ে বারান্দা ও মেঝেতে রাখা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে রোগীদের পরামর্শ দিতে দেরি হয়। হাসপতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিষ্ট দিয়ে চলছে কাজ। পরিচ্ছন্নতা কর্মি নাই ৩৬জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলে সমস্যা সমাধান হবে। শয্যা সংকটই বেশি। সরকারী ইডিসিএল চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ না করায় রোগির পরামর্শ পত্রের চাহিদা মতো ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। চিকিৎসক আর হাসপাতালে ওষুদের সরবরাহ কম থাকায় এমন অভিযোগ। তারপরেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
×