ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিউলী আহমেদ

জীবন সায়াহ্নের গল্প

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৩ মে ২০২২

জীবন সায়াহ্নের গল্প

প্রায় প্রতিটি সংসারেই থাকে প্রবীণ সদস্য। এককালে যে মানুষটি ছিলেন কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর। সময়ের ব্যবধানে তিনিই হয়ে পড়েন কর্মশক্তিহীন। অনেক সময় বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিরও শিকার হন। তখন তার প্রয়োজন হয় সেবা, স্বজনের সান্নিধ্য। অথচ অনেক ক্ষেত্রে সংসারের অপর সদস্যরা এ বিষয়ে থাকেন উদাসীন। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ শিশুর মতন হয়ে যায়। কিন্তু তাদের সেই আচরণেও সন্তানরা অনেক সময় বিরক্তি প্রকাশ করে। তাদের সুখের অন্তরায় মনে করে বৃদ্ধ বাবা-মাকে। যার ফলে বাবা-মায়ের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যে বয়সে এই মানুষগুলো আপনজনদের সান্নিধ্য কামনা করে, সন্তান-সন্তুতি, নাতি-নাতনি নিয়ে বাকিটা জীবন হাসি-আনন্দে কাটাতে চায়, সেই বয়সে তারা হয় চরম অবহেলিত। অথচ এই বাবা-মা-ই দিনরাত পরিশ্রম করে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে সন্তানের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টা করে যায়। কষ্ট হলেও সন্তানকে একটা ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর চেষ্টা করে। একটু ভাল খাওয়ানো-পরানোর চিন্তায় মগ্ন থাকে। এমনকি সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আর একাকীত্বের দিকে না তাকিয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাতেও দ্বিধা বোধ করেন না। আশায় থাকে, বড় হয়ে সন্তান তাদের দেখবে। কিন্তু সত্যি কি তা হয়!? সন্তানরা বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আর ফিরে আসেনা। বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা ভুলে যায়। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তাদের একটু চোখের দেখাটাও দেখতে যায় না। আর বৃদ্ধ বয়সে সেই বাবা-মা আশায় পথ চেয়ে থাকে- সন্তান তার আসবেই। অনেক দায়িত্ব তার। তাই সময় পাচ্ছে না। সময় হলেই আসবে। এভাবে নিজেদের তৈরি মিথ্যে সান্ত¦নায় এক সময় নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে যায়। বুক ভরা অভিমান নিয়ে কখনও তারা চলে যায় না ফেরার দেশে। তবু কখনও সন্তানের অমঙ্গল চায় না, তাদের প্রতি বিরক্ত হয় না। মন ভরে তাদের জন্য দোয়া করে যায়। সেই বাবা-মায়ের জন্যই সন্তানদের সময় হয় না। অনেক উচ্চপদস্থ বাবা-মা’কেও শেষ বয়সে যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। অথচ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন সাধ্যমতো। সেই সন্তানের কাছে কি বাবা-মা এই বৃদ্ধ বয়সে একটু নিরাপত্তা, ভালবাসা আশা করতে পারে না? কতটা অক্ষম আমরা সন্তানরা! সেকি বাবা-মায়ের সঠিক শিক্ষার অভাব? নাকি আমাদের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা! এ নিয়ে অনেক সচেতনতামূলক নাটক, সিনেমাও তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি পালিত হলো মা দিবস। মাকে ভালবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিবস লাগে না। তবু একটা বিশেষ দিন হলে মন্দ হয় না। বিশেষ ভাবে স্মরণ করা। যারা মাকে কখনও ভালবাসি বলতে পারেনি, তারা বিভিন্ন ভাবে মাকে ভালবাসি কথাটা বুঝাতে চায়। কিন্তু তা যেন বিশেষ একটা দিনে সীমাবদ্ধ না থাকে। বাবা-মায়ের জন্য ভালবাসা বিশেষ একটা দিনের জন্য না, অনন্তকালের। ইসলাম বলে,“পিতা-মাতার প্রতি ‘উহ’ শব্দটিও করো না।” দিন যত যাচ্ছে সমাজে এই প্রবীণ মানুষগুলো তত বেশি অবহেলার শিকার হচ্ছেন। আমরা অনেক বেশি অমানবিক হয়ে যাচ্ছি। সময়ের আবর্তে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তবু আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না। যে দুজন বাবা-মা এতগুলো সন্তান লালন-পালন করতে পারে, সেই সন্তানরা সবাই মিলে মাত্র দুজন বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে পারি না! কেন তাদের ঠাঁই হবে বৃদ্ধাশ্রমে! এ যে বড় লজ্জার। তবু আশা-একদিন হবে নতুন সূর্যোদয়। হবে নতুন ভোর। আমরা সবাই আবার একান্নবর্তী পরিবার হব। বৃদ্ধাশ্রমগুলো অকেজো হয়ে যাবে। বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সবাই একসঙ্গে এক বাড়িতে গড়ব আমাদের সুখের ঠিকানা।
×