ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

বৈচিত্র্যময় গায়ে হলুদ

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৩ মে ২০২২

বৈচিত্র্যময় গায়ে হলুদ

আমরা বাঙালী। উৎসবপ্রিয়তা আমাদের চিরায়ত বোধ। বারো মাসে তেরো পার্বণের আনুষ্ঠানিকতায় আমরা উদ্বুদ্ধ হই। আর সামাজিক ও ধর্মীয় রীতির বাতাবরণে বিয়ে হলো সবচাইতে প্রাচীনতম এক শাশ্বত সংস্কার। যা যাপিত জীবনের নিয়মিত অনুষঙ্গও বটে। বিয়ে শুধু দুই নারী পুরুষের অবিচ্ছেদ্য মিলবন্ধন নয়। বরং দুই অজানা পরিবারের মিলন গ্রন্থিতে বিয়ে নামক সামাজিক পর্বটি সুসংহতই শুধু নয় চিরস্থায়ী সম্পর্কের এক নির্মল বাধনের দৃঢ়শক্তি। তেমন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানটি পালনেও রয়েছে বাধ্যবাধকতা, বিধিবন্ধন ছাড়াও উৎসব আয়োজনের অপার সমারোহ। বিয়ে মানুষের ধর্মীয় চেতনায় অনন্য মিলন তৈরির এক সম্ভাবনাময় বিশ্ব। ধর্মীয় বিধি নিষেধ ছাড়া বিয়েতে নানামাত্রিকে প্রভাব বিস্তার করে থাকে হরেক রকম আচার অনুষ্ঠানও। যা শুধু ধর্মীয় চেতনায় পার্থক্য নির্দেশ করে না বরং অঞ্চলগত বৈশিষ্ট্যও নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। আমাদের ছোট বাংলাদেশও বিভিন্ন মাত্রার আঞ্চলিক সম্ভারে ভরপুর। সঙ্গত কারণে অনুষ্ঠান-আনুষ্ঠানিকতায়ও ছাপ পড়ে অঞ্চলগত তারতম্য। সেটা বিয়ের গায়ে হলুদ, মেহেদি পরানো থেকে শুরু করে বরবধূর বিয়ের সাজসজ্জায়ও নানান বৈশিষ্ট্যে দৃশ্যমান হতে থাকে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আচার অনুষ্ঠানের যেন অন্ত নেই। সেটা দধিমঙ্গল থেকে আইবুড়ো ভাত ছাড়া গায়ে হলুদের জমকালো আড়ম্বর। শেষ অবধি লগ্ন মেনে বিয়ে পড়ানোর কয়েক ঘণ্টার পালাক্রম যেন বর কনের এক দীর্ঘসময় পার করে দেয়া। সেখানেও শেষ হয় না। কনকাঞ্জলি দিয়ে কনেকে পিতৃগৃহ ছেড়ে আসতে হয়। শ্বশুরবাড়িতে এসে হয় আর এক অনুষ্ঠান বাসি বিয়ে ও বধূবরণ। আর মুসলমানদের বিয়ে অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধিতে হয় ঠিকই কিন্তু আনুষ্ঠানিকতায় সমাজ সংস্কার ও আচারবিধির ছাপ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। সেখানে গায়ে হলুদের মধ্য দিয়ে উৎসবের যাত্রা শুরু। মেহেদি রাতের অনুষ্ঠানও পরম উপভোগ্য। চিরায়ত হরেক সংস্কারে আধুনিকতার নির্মাল্য পড়াও সময়ের অনিবার্য চাহিদা। বর কনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও চমকপ্রদ। তত্ত্ব আসে উভয় পক্ষের শ্বশুরবাড়ি থেকে। সেখানে গায়ে হলুদের প্রাসঙ্গিক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বাটা হলুদ ও মেহেদি অনুষ্ঠানের মূল উপকরণ। আমাদের প্রচলিত মেহেদি অনুষ্ঠানের সেই চিরায়ত সঙ্গীত আজও তার সমৃদ্ধ বার্তায় সংশ্লিষ্টদের মাতিয়ে দেয়- হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো বাটো ফুলের মৌ বিয়ের সাজে সাজবে কন্যা কিন্তু মেহেদি ও গায়ে হলুদ শুধু কনের জন্য হয় না বরং বরকেও হলুদ-মেন্দি পরানো নিত্যজীবনের অনন্য চাহিদা। বর-বধূ উভয়কেই প্রথমে গায়ে হলুদ দেয়া হয় পারিবারিক নিকটজনের পক্ষ থেকে। তেমন অনুষ্ঠান সাঙ্গ হলে মেহেদি পরানো শুরু হয়। সেখানে শুধু বর কনে নয় আত্মীয়স্বজনরা বিশেষ করে মেয়েরাও হাতে মেহেদি পরে অনুষ্ঠানকে নানামাত্রিকে উপভোগ্য করে তোলে। বিয়ের সাজসজ্জায় মেহেদির উৎসব যেন আমোদ আহ্লাদে ভরপুর আয়োজন। আর কনের বাড়িতে তেমন আনন্দের সঙ্গে একাত্ম হয় বেদনার করুণ সুর। কারণ বিয়ের অনুষ্ঠানের পরপরই কনেকে চলে যেতে হয় বরের সঙ্গে তার বাড়িতে। এটাই আমাদের সমাজ-সংসারের প্রচলিত বিধি। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এমন নিয়মের ব্যত্যয় আজ অবধি হয়নি। সেখানে সামাজিক নিয়ম আর পারিবারিক বন্ধন যেন এক অবিচ্ছিন্ন সূতোয় গাঁথা। অনুষ্ঠান সর্বস্ব এমন বৈবাহিক বাঁধন চিরস্থায়ী গ্রন্থি তৈরিতে যেন নিয়ামক শক্তি।
×