ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে জাল স্ট্যাম্প তৈরির হোতাসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২২ মে ২০২২

রাজধানীতে জাল স্ট্যাম্প তৈরির হোতাসহ গ্রেফতার ৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় জাল জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি হচ্ছে। যা বৈধ ও অবৈধ ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে জনসাধারণ এসব জাল স্ট্যাম্প কিনে ভোগান্তিতে পড়ছেন। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র‌্যাব-৩ যৌথ অভিযানে অবৈধ জাল জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের হোতা ফরমান আলী সরকারসহ (৬০) চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হচ্ছে তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) এবং মোঃ রাসেল (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এছাড়া, উদ্ধার করা হয় কার্টিজ পেপার ৫ হাজারটি, মনিটর ১টি, সিপিইউ ১টি, প্রিন্টার ১টি এবং নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, সম্প্রতি র‌্যাব-৩ ও এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অধিক লাভের আশায় জাল জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার র‌্যাব-৩ ও এনএসআই’র যৌথ দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের হোতা ফরমান আলী সরকার ও তার সহযোগী তুহিন খান, আশরাফুল ইসলাম ও মোঃ রাসেলকে গ্রেফতার করে। অভিযানে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩০০০টি, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬৫০০টি, ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১৫০০টিসহ মোট ২৪ হাজার ৯০০টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়, যার মূল্য ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অভিযানে ৫০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২০০টি, ১০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩৬৪০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪২০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৬০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩৭২০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১১২৮০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৪২৮০টি, ৪ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২৪০টি ও ২ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪৮০টিসহ মোট ৩৮ হাজার ২০০টি রাজস্ব স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। যার মূল্য ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫২০ টাকা। সব মিলিয়ে উদ্ধার করা সব স্ট্যাম্পের সর্বমোট মূল্য ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা। এছাড়া কার্টিজ পেপার ৫০০০টি, মনিটর একটি, সিপিইউ একটি, প্রিন্টার একটি এবং নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে আসছিল এ চক্রের সদস্যরা। ফরমান আলীর যত জালিয়াতি ॥ গ্রেফতারকৃত ফরমান আলী সরকার কুড়িগ্রাম সরকারী ডিগ্রী কলেজ হতে ডিগ্রী পাসের পর ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন। একই অপরাধে ২০১৭ সালেও পল্টন থানায় ফরমান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। ওই মামলায় তিনি কারাভোগ করেন। জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়ান। গ্রেফতারকৃতের সময় ফরমান নিজেকে ভেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিলেও জব্দ সব স্ট্যাম্প সম্পর্কে সে তার রেজিস্টারপত্রে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি বিশাল প্রতারকচক্র গড়ে তোলেন। তার সহযোগী গ্রেফতারকৃত তুহিন খান শনির আখড়ার একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করতে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিন-চার বছর ধরে তিনি এ প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারকৃত আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। আর গ্রেফতারকৃত রাসেল নেত্রকোনার কোনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন। স্ট্যাম্প জালিয়াতি চক্রের তালিকা প্রস্তুত ॥ র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার সিআইডির একটি দল তিনজনকে গ্রেফতার করে। আমরা তথ্য পেয়েছি বৈধ ভেন্ডারদের মধ্যে অনেকে বৈধতার সুযোগ নিয়ে আসল স্ট্যাম্পের সঙ্গে নকল বা জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করছে। আমরা গ্রেফতারকৃতদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রস্তুতি করেছি। আদালতে বসেই জাল স্ট্যাম্প বিক্রি ॥ আদালতে বসেই জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করত ওরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুত ও বিক্রির করত তারা। এরকমই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ মনির হোসেন ওরফে ইমরান (৪০), দেলোয়ার ওরফে আইকে দেলোয়ার (৩৫) ও পাখির আলী (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬৮৩টি ২০ টাকা মূল্যের বাংলাদেশ কোর্ট ফি, ৪৪৫টি ১০ টাকা মূল্যের বাংলাদেশ কোর্ট ফি, ১৮৫টি ৫ টাকার বাংলাদেশ কোর্ট ফি স্ট্যাম্পসহ মোট ১৯ হাজার ৩৫ টাকার স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এদিকে শনিবার গ্রেফতারকৃত তিনজনকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিআইডি ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিসানুল হক এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে হাইকোর্টে জাল স্ট্যাম্প সরবরাহ করতেন। কয়েক বছরে তারা এ ধরনের জাল স্ট্যাম্প সরবরাহ করে সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জানান, একটি চক্র হাইকোর্ট ডিভিশনসহ বিভিন্ন স্থানে জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে আসছিল, এমন তথ্য পায় ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) সিআইডি। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার রাতে ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) সিআইডির একটি দল হাইকোর্টের প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত স্ট্যাম্প ভেন্ডারের দোকান এবং সড়ক ভবনের সামনে অবস্থিত দোকানে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তিনজন প্রতারককে গ্রেফতার করে।
×