ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আল মোবাচ্ছের হোসেন

কৃষিতে অনন্য অবদান

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২২ মে ২০২২

কৃষিতে অনন্য অবদান

কৃষি গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই ধারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গুণগত, দক্ষ ও মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক জনবল প্রয়োজন। কৃষি গবেষণায় কার্যকর আউটপুট ও সফলতা প্রাপ্তিতে কৃষি বিজ্ঞানীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিএআরসি জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এনএআরএস) সমূহের এ্যাপেক্স বডি। বর্তমানে এনএআরএসভুক্ত ১৪টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার ১০০ বিজ্ঞানী কাজ করছেন। বিএআরসির মূল দায়িত্ব হলো কৃষিবিষয়ক গবেষণা, পরিকল্পনা পরিচালনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা। এছাড়া বিএআরসি আইন-২০১২ অনুসারে, বিএআরসির অন্যতম দায়িত্ব হলো- এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞানীদের দক্ষতার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন করা। বাংলাদেশে আজ কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের অবদান স্বীকৃত। কৃষি বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা, নিবিড় গবেষণায় উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে গবেষণা পরিচালনায় দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এর প্রয়োগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি, কোভিড-১৯-এর অভিঘাতসহ বিভিন্ন আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টেকসই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। নিরাপদ কৃষি ও কৃষিতে সম্ভাবনাময় লাভজনক অন্যান্য প্রযুক্তি কনজারভেশন কৃষি, প্রিসিশন কৃষি, কালেকটিভ কৃষি, হাইড্রোপনিক, এরোপনিক, ক্রপ মডেলিং ও ক্রপ সিম্যুলেশন ইত্যাদি প্রয়োগ ও এর ব্যবহারে গবেষণা ও উন্নয়ন পরিচালনা করাও জরুরী। বিএআরসি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০০৯-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব বাজেট ও বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি কর্মসূচী (এনএটিপি ফেজ-১ ও ফেজ-২) ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি বিজ্ঞানীদের পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রী অর্জনের সুযোগসহ বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। বিএআরসির বার্ষিক প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচীতে বিগত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৯) এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৩০০ বিজ্ঞানী দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা (পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরেট) ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়াও বিএআরসির উদ্যোগে দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণে প্রায় ১০ হাজার এবং সেমিনার ও কর্মশালায় প্রায় ১৮ হাজার জন এনএআরএস, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণ করেন। বিএআরসি মানবসম্পদ উন্নয়নের অংশ হিসেবে এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নবীন বিজ্ঞানীদের ৪ মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ আয়োজন করে চলেছে। বিএআরসির উদ্যোগে ইতোমধ্যে ২৭টি ব্যাচে (প্রতি ব্যাচে ৪০ জন) কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। উচ্চতর শিক্ষা কৃষি গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এনএআরএস প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞানীগণ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা শিরোনাম ও সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আসছেন। বিএআরসির রাজস্ব খাত ও অন্যান্য প্রকল্পে গৃহীত বৃত্তিমূলক উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীগণ কৃষি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। আম্ফান, কোভিড-১৯র অভিঘাতসহ বিভিন্ন কৃষি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিষয় নির্ধারণপূর্বক পিএইচডি গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হচ্ছে কর্মরত বিজ্ঞানীদের শতকরা ৩৯ ভাগ পিএইচডি ডিগ্রীধারী বিজ্ঞানী, যা বিশ্বে অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের তুলনায় অপ্রতুল। মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০০৯-২০২৫ অনুযায়ী গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে প্রতি ৫ বছর পরপর প্রায় ২০০ পিএইচডি ডিগ্রীধারী বিজ্ঞানী অবসরে যাচ্ছেন। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতি ৫ বছর পরপর গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের অপেক্ষাকৃত নবীন প্রায় ২৩০ বিজ্ঞানীর পিএইচডি গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল এ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি (এনএটিপি) প্রকল্পের ১ম ফেজে ১০৮ বিজ্ঞানী এবং ২য় ফেজে ১৪০ বিজ্ঞানীকে দেশে ও বিদেশে পিএইচডি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে পিএইচডিধারী বৈজ্ঞানিক জনবল পুল তৈরির জন্য পিএইচডি ফেলোশিপ কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নে দেশে ও বিদেশে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ/ কর্মশালা/সেমিনার/সভা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমান বিশে^ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে যুগোপযোগী কৃষি গবেষণায় উচ্চশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। লেখক : প্রিন্সিপাল ট্রেনিং অফিসার, বিএআরসি, ঢাকা [email protected]
×