ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট নেই

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২২ মে ২০২২

সঙ্কট নেই

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের শুরুতেই বাংলাদেশের একটি মহল উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। কেউ সরাসরি আবার কেউ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করছেন। সতর্কবাণী উচ্চারণে চেষ্টা করছেন ভীতি সঞ্চারের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলের নেতারা রীতিমতো আশাবাদী। এই বুঝি বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেল! তাদের এসব বক্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছু পরিসংখ্যান। পরিকল্পনাহীন সারবিহীন খাদ্য উৎপাদন নীতিমালায় শ্রীলঙ্কায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। করোনায় রেমিটেন্স ও রফতানি বাণিজ্য কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক ঋণের কিস্তি জোগাতে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিদেশ থেকে জ্বালানিসহ খাদ্য আমদানির এবং দাতাগোষ্ঠীর অর্থও নেই। জীবনযাত্রায় বিপর্যস্ত অবস্থা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। আপাতত বড় কোন ধনী রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া পরিস্থিতি উত্তরণ কঠিন। অর্থনৈতিক মানদ-ে কোনভাবেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন নয়। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ভাল, মজুদও যথেষ্ট। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানির ঝুঁকি নেই। করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনভাবেই তা উদ্বেগজনক নয়। আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে রফতানি বাণিজ্য। স্বাভাবিক রয়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ। চলতি বছর প্রথম চার মাসে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশ গেছেন। এমন কোন বৈদেশিক ঋণের বোঝা নেই, যাতে রিজার্ভে চাপ বাড়বে। তাহলে এত কথা কেন? এই প্রশ্নটি খোদ প্রধানমন্ত্রীর। এসব কথা যারা বলছেন তারা মনে প্রাণে চাচ্ছেন বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হোক। আদৌ কি তা সম্ভব? সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজেটপূর্ব আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের দু’মাসের রেমিটেন্স দিয়ে পুরো বছরের বৈদেশিক ঋণের দায় শোধ করা সম্ভব।’ এর একটি হিসাবও তিনি দিয়েছেন। প্রতি মাসে আমাদের রেমিটেন্স আসবে দুই বিলিয়ন। বৈদেশিক ঋণের দায় শোধ করতে এত অর্থের প্রয়োজনও হবে না। কারণ, আমাদের সকল ঋণ নেয়া হয়েছে সহজ শর্তে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ২.৪ বিলিয়ন ডলার, যা পরের বছর বেড়ে ২.৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক দেনা মেটাতে ৩.৩ বিলিয়ন ডলার এবং এর পরের বছর ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শঙ্কা কোথায়? চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে দেশেও মূল্যস্ফীতি উর্ধমুখী রয়েছে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই মূল্যস্ফীতির পরিমাণ সঙ্কটাপন্ন শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক কম। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা অভ্যস্ত, এবারও পারব। সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের অনেক বিকল্প উপায় আছে। আমরা ব্যর্থ হব না।’ নানা অপপ্রচারে যাদের মনে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরি হয়েছে, অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য ও আত্মপ্রত্যয়ে তা দূর হবে নিশ্চয়ই।
×