ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি শুরু হলে ভোজ্যতেলের দাম কমবে

চাল আটা ডালের বাজার চড়া, কমেছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশিত: ০০:২০, ২১ মে ২০২২

চাল আটা ডালের বাজার চড়া, কমেছে পেঁয়াজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইন্দোনেশিয়া থেকে পামঅয়েল আমদানি কার্যক্রম শুরু হলে দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমবে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম। বাংলাদেশে এখন সরকার নির্ধারিত দামে সব ধরনের ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে এই দাম এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে চাল, আটা, মসুর ডাল, রসুন, আদা এবং ডিমের দাম। তবে দাম কমেছে পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি ও চিনির। সবজির বাজার চড়া। দেশী ও ইলিশ মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের মতো বেশি দামে। রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাপ্তান বাজার, মুগদা বড় বাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কাঁচা বাজার, গোড়ান বাজার এবং মালিবাগ রেলগেট কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। তবে শীঘ্রই ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বাজারের সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে গেছে। এখন দেশে দ্রুত ভোজ্যতেলের দাম কমাতে হবে। তাদের মতে, ইন্দোনেশিয়ার রফতানি বন্ধের খবরে আমদানিকারক ও মিলমালিকরা দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে গত এক বছরের পাঁচবার তেলের দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়িয়েই ব্যবসায়ীরা শান্ত হয়নি, অবৈধভাবে মজুদ বাড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। এতে ঈদের আগে ও পরে সাধারণ মানুষ বাজার থেকে তেল কিনতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের এসব অপকর্মে স্তম্ভিত বিশ্ববাসী। দেশের অভ্যন্তরেও নিন্দার ঝড় বইছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে মজুদকৃত তেল উদ্ধার করাসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে সরকার। এছাড়া বিপুল অঙ্কের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। সচেতন নাগরিক সমাজ দাবি করেছে- অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম।’ আর সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম ধরা পড়ছে। ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরাই দায়ী। জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের ৬০ ভাগ চাহিদা পূরণ হয় পামঅয়েল দিয়ে। আর পামঅয়েলের ৮০ ভাগ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। এলসি বা ঋণপত্র খোলার পর ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়া থেকে ভোজ্যতেল আনতে প্রায় তিনমাস সময় লাগে। অথচ ইন্দোনেশিয়া রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা আরোপের একদিন পরই লিটার প্রতি ভোজ্যতেলের দাম ৩৮-৪৪ টাকা বাড়ানো হয়, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমদানিকারকদের আগের কম দামে এলসি করা ক্রুড পামঅয়েল এখনও জাহাজে ওঠেনি। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো আন্তর্জাতিক বাজার দেখে দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে এখনও দাম বাড়ানোর কোন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া সোমবার থেকে ভোজ্যতেল রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। এরপরই ভোজ্যতেল নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি বৈঠকের আয়োজন করবে। সেই বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হতে পারে। ভোজ্যতেল এখন অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। বহির্বিশ্বে দাম কমলে দেশে মূল্য সমন্বয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বেড়ে প্রতিকেজি সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৬০-৭০, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৬ এবং মোটামানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। আটা প্যাকেট ৪৮-৫০ টাকা প্রতিকেজি, খোলা আটা ৪৬-৫০, ময়দা খোলা ৫৫-৬০ এবং প্যাকেট প্রতিকেজি ৬৫-৬৮, সয়াবিন তেল খোলা ১৮২-১৯০, সয়াবিন তেল বোতল পাঁচ লিটার ৯৭০-৯৯০, পামঅয়েল লুজ ১৭০-১৭৬, পামঅয়েল সুপার ১৭৮-১৮০, সয়াবিন প্রতিলিটার বোতল ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া মসুর ডাল ছোট দানা ১৩০-১৪০, বড় দানা ১০৫-১১০, পেঁয়াজের দাম কমে দেশীটি ৩৮-৪০, আমদানিকৃতটি ৪০-৪৫, রসুনের দাম বেড়ে ১৩০-১৬০, রসুন দেশী ৯০-১২০, আদার দাম বেড়ে ৮০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৬০, চিনি ৭৮-৮০ এবং প্রতিহালি ডিম ৩৮-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। ৭০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি চিংড়ি মাছ। এছাড়া আকার ও সাইজভেদে ৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ইলিশ মাছ। অন্যান্য দেশী প্রজাতির মাছের দামও চড়া। তবে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের মতো চড়া দামে। এছাড়া শাকসবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
×