ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১০ লাখ টাকা সহায়তা হাদিসুরের পরিবারকে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২১ মে ২০২২

১০ লাখ টাকা সহায়তা হাদিসুরের পরিবারকে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় বিধ্বস্ত বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) ২২০ কোটি টাকা মূল্যের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ এখনও অকর্মক্ষম পরিত্যক্ত (এবানডেন্ট কোল্ড লে-অফ) অবস্থায় রয়েছে। রকেট হামলায় নিহত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের পরিবারকে শুক্রবার ১০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে আইটিএফ (ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন) ও বিএমএমওএ (বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন) এর পক্ষ থেকে। এর আগেও বিএমএমওএ হাদিসের পরিবারের জন্য ৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ১০ লাখ ২৭ হাজার ১৭৭ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক গ্রহণ করেন হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মওলা প্রিন্স। এদিকে, বিএসসির পক্ষ থেকে জাহাজটির বিদেশী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি পূরণ দাবির বিষয়টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। ওই বিদেশী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি স্পষ্টভাবে বিএসসিকে জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএসসি সূত্রে জানিয়েছে, বীমাকৃত দেশীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দেশীয় সাধারণ বীমা এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লন্ডনের লয়েডের ব্রোকার টাইজারস। সূত্র জানায়, দেশীয় সাধারণ বীমার আওতায় বীমার দাবি ১০ এবং টাইজারসের আওতায় ৯ শতাংশ রয়েছে। এদিকে, অলভিয়া বন্দরের অলভিয়া প্রণালীর যে স্থানে গত ২ মার্চ বাংলার সমৃদ্ধির ওপর রকেট হামলার ঘটনা ঘটে এবং এতে জাহাজটির ব্রিজ সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়- সেটি এখনও সেখানে রয়েছে। তবে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায়। আগে বলা হয়েছিল, জাহাজটির সেখানকার লোকাল এজেন্ট এবং অলভিয়া পোর্ট কন্ট্রোল জাহাজটির দেখভাল করছে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ অকর্মক্ষম পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় জলদস্যুদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে নাবিকদের সংগঠন সূত্রে বলা হয়েছে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অপরদিকে, জাহাজটির ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিএসসি কর্তৃপক্ষ যে ২২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রদানে যেহেতু সময় নেবে- সেক্ষেত্রে স্থানীয় শিপিং এজেন্টকে এটির দায়িত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু বিএসসি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখনও কিছুই করেনি। অপরদিকে, বিএমএমওএএর পক্ষ থেকে জাহাজ পরিচালনায় গাফিলতির কারণে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবির পর সরকার যে কমিটি গঠন করেছে তাতে বিএমএমওএর কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি। ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত কোন রিপোর্ট প্রদান করা হয়নি। শুক্রবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বিএমএমওএএর কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মোঃ আনাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বিএসসির পক্ষ থেকে হাদিসুর রহমানের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি। গত ১৫ মার্চ ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএসসির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আমির মোঃ আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে হাদিসুর রহমানের পরিবারকে বড় ধরনের ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে। কিন্তু তা এখনও দেয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়াটি বিএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। নেতৃবৃন্দ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দুই দফা দাবি উপস্থাপন করেন। প্রথমত দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক। দ্বিতীয়ত নিহত হাদিসুর রহমানের পরিবারকে সংস্থার পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে অলভিয়া বন্দরে বাংলার সমৃদ্ধির উপর রকেট হামলার সময় ওই জাহাজে মোট ২৯ নাবিক ছিলেন। রকেট হামলায় হাদিসুরের মৃত্যু হয়। পরে প্রথমে ২৮ নাবিক এবং আরও পরে হাদিসুরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এই ঘটনা নিয়ে গত ৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি জানায় বিএমএমওএ। ২০ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। যা এখনও হয়নি।
×