ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্ম ব্যবহার করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র করছে’

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২১ মে ২০২২

‘সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্ম ব্যবহার করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র করছে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধুর দল টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকলেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি উত্তরা থানার গঠনকল্পে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু পরিষদ মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ২৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্মূল কমিটির উত্তরা থানা শাখার আহ্বায়ক মারুফ হোসেন টিপুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব চিশতি মাহমুদ হাসানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর টাবী। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো শিক্ষাবিদ ড. রতন সিদ্দিকী, উদীচীর উত্তরা থানার সভাপতি রেজাউল করিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি সফিউল জহির, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিয়াউল হক, আওয়ামী লীগের উত্তরা থানার সহ-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, উত্তরা কালাচারাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রবিউল মাহমুদ, জাতীয় রবীন্দ্র সংস্থার নেতা প্রদীপ কুমার, সংস্কৃতি কর্মী প্রশান্ত চক্রবর্তী প্রমুখ। সম্মেলনের শুরুতে নির্মূল কমিটির উত্তরা থানার এ পর্যন্ত প্রয়াত নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ছিল, যা মূর্ত হয়েছে বাংলাদেশের মূল সংবিধানে গৃহীত রাষ্ট্রের চার মূলনীতি এবং ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ভেতর। দুর্ভাগ্যের বিষয় বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের মূলনীতি মুছে ফেলে পাকিস্তানের আদলে সমাজ ও রাষ্ট্রের যে মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ আরম্ভ হয়েছে তা এখনও বন্ধ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর দল একটানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারিনি। তার অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশ কর্তৃক কলেজ শিক্ষক ড. লতা সমাদ্দারের লাঞ্ছনা এবং মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুরের রামকুমার স্কুলের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল, সিলেটের গোলাপগঞ্জের অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস ও নওগার মহাদেবপুরে শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকী ঘটেছে নিন্দনীয় গ্রেফতারের ঘটনাও। দেশব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়নের আলো জ্বললেও আলোর নিচেই সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের বিস্তৃতি ঘটছে। এমন বাস্তবতায় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে রাজনীতিতে প্রতিফলিত না করা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এ জন্য নির্মূল কমিটিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মকান্ড পরিচালিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’ সম্প্রতি দুদক ও মানবাধিকার কমিশনে জমা দেয়ার পর মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন বেড়ে গেছে। এদের সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে। স্থানীয়দের বোঝাতে হবে কিভাবে এই মৌলবাদী শক্তি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। সম্মেলনে ফাহমিদা হককে সভাপতি ও সোহেল আনোয়ারকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৭ সদস্যের নির্মূল কমিটির উত্তরা থানার কমিটি গঠিত হয়।
×