ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌন্দর্য হারাচ্ছে জাহাজমারা সৈকত

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২১ মে ২০২২

সৌন্দর্য হারাচ্ছে জাহাজমারা সৈকত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটনের নতুন গন্তব্য পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার জাহাজমারা দ্বীপ ও সৈকত। চারদিকে চোখ জুড়ানো সবুজ বনাঞ্চল। তার পাশে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। প্রকৃতির অপরূপ এ সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন অগণিত পর্যটক ছুটে যাচ্ছেন জাহাজমারা দ্বীপ ও সৈকতে। ঝড় ঝঞ্জার মাঝেও কমতি নেই পর্যটকদের। সব ধরনের দুর্যোগ আর প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে পর্যটকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন এর চোখ জুড়ানো রূপ। কিন্তু অব্যবস্থাপনা আর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার কারণে দিন দিন দ্বীপটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে। পর্যটকরা প্রকাশ করছেন বিরক্তি। তারা চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দ্বীপের অপরূপ শোভা থেকে। ফলে পর্যটনের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও অঙ্কুরেই তা ম্লান হতে যাচ্ছে কেবলমাত্র ময়লা আবর্জনার কারণে। বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে যথেষ্ট উদাসীনতা। রাঙ্গাবালীর মৌডুবী ইউনিয়নের চরগঙ্গা থেকে ১০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পেরোলেই চোখে পড়ে জাহাজমারা দ্বীপ। সাগরের নীল জলরাশির বুকে জেগে আছে এক টুকরো ভূখন্ড। যা কেবলই সবুজে আচ্ছাদিত। ঘন জঙ্গল দ্বীপটিকে দিয়েছে অনন্য সৌন্দর্য। তার পাশে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। এ দুয়ের টানে গত কয়েক বছরে দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে নতুন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই বহু পর্যটক যাচ্ছেন সেখানে। ঈদের মতো উৎসবগুলোতে পর্যটকদের রীতিমতো ঢল নামে। স্থানীয়দের ধারণা এবারের ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে অন্তত ৩০-৪০ হাজার পর্যটক সেখানে ছুটে গিয়েছেন। ঈদের ছুটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতে অনেকে এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। আবার কেউ কেউ অফিস কলিগদের নিয়ে। তাদের হৈ-হুল্লোড়ে জমে উঠেছে দ্বীপের পরিবেশ। করোনায় স্থবির হয়ে যাওয়া সৈকত ফিরে পেয়েছে প্রাণ। তবে পর্যটকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, চরম অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন জাহাজমারা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, সি-বিচ ও সৈকতে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। সৈকতের নিঃসর্গ পয়েন্টের বিচজুড়ে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস্-চানাচুরের প্যাকেট ও নারিকেলের ছোবড়া স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। পর্যটকদের একাংশই এগুলো যেখানে-সেখানে ফেলছেন। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পর্যটক রওশন আহম্মেদ মৃধা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে পর্যটক আরও বাড়বে। বিশেষ করে চরগঙ্গা থেকে জাহাজমারা পর্যন্ত কাঁচা ৮-১০ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ খুবই প্রয়োজন। এর পাশাপাশি সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বিশেষ নজর দিতে হবে। সাব্বির হোসাইন নামের আরেক পর্যটক বলেন, এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান কিংবা ডাস্টবিন প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দেয়া উচিত। পর্যটক সুজন বলেন, প্রচুর পর্যটকের সমাগম এখানে। কিন্তু সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে বহু পর্যটক নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। জাহাজমারা দ্বীপ ও সৈকতের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মৌডুবী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রাসেল বলেন, আমাদের নিজ উদ্যোগে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। নির্বিঘ্নে পর্যটকরা জাহাজমারা সৈকতে আনন্দ উপভোগ করছে। মাঝে মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারও করা হচ্ছে। বন বিভাগের মৌডুবী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, জাহাজমারা সৈকতের নিঃসর্গ পয়েন্ট বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকার বাইরে। ওটা খাস সম্পত্তি। সুতরাং সেখানে আমাদের তদারকি নেই। আমাদের তদারকি কেবল সংরক্ষিত বনে। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জাহাজমারা সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় কি করা যায়, তা আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। শংকর লাল দাস, গলাচিপা
×