ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় দফা সময় বৃদ্ধি ॥ আরও হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কবে শেষ হবে?

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২১ মে ২০২২

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কবে শেষ হবে?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের সময় বেড়েছে আরও এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় সময় বাড়ল। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ পাওয়া গেলে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে চার হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এরপরও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না প্রকল্প পরিচালক। সিডিএর এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিন। ইতোমধ্যে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান। সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর নক্সায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এ নিয়ে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। নক্সায় ত্রুটি, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প অনুমোদনের কারণে বেড়েছে ব্যয়। পরে নক্সা নিয়ে বন্দর ও সিএমপির আপত্তির কারণে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুর নক্সা ও ভূমি জটিলতা, বিভিন্ন সংস্থার নারাজি কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে। এখন চাহিদামতো অর্থ যথাসময়ে পাওয়া না গেলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না তাদের। বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিংরোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এয়ারপোর্ট রোডসহ একাধিক মেগা প্রকল্পের সংযোগস্থল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা। অথচ এখানে নেই ইউলুপ, ইউটার্ন কিংবা সার্ভিস রোড। এ অবস্থায় এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে যানজট বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে ট্রাফিক বিভাগ। এদিকে, আগামী ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর আগে টানেল চালু হলে বন্দর-পতেঙ্গাসহ নগরজুড়ে যানজট বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যানজট এড়াতে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আট কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করে পতেঙ্গা থেকে নিমতলী পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দর, সিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আপত্তির কারণে কাজের গতি কমেছে। যেসব সমস্যা আগে দেখা যায়নি কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা যাচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ যেসব বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল সেগুলো বৈঠকে সমাধান হয়েছে।’ নকশায় ত্রুটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে সিএমপি, তারা কিছু নকশা সংস্কারের কথা বলেছে। আমরা সেগুলো সংশোধন করেছি। নতুন নকশা অনুযায়ী কাজ হবে।’ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সড়কের মাঝখানে থাকা বিদ্যুতের পোলগুলো সরাতে দেরি করছে পিডিপি। সড়কের নিচে থাকা ওয়াসার পাইপ লাইন কাজ করার সময় ফেটে যাচ্ছে। এগুলো সরানোর জন্য ওয়াসাকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা সেগুলো সরাতে দেরি করছে। এখনও টাইগারপাস থেকে দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত রেললাইনের ওপর কাজ করার অনুমতি দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। টাইগারপাস থেকে দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও পিলার বসানো যাবে না বলেছেন রেলের কর্মকর্তারা। তাই বিকল্পভাবে রেললাইনের ওপর কাজ করতে হবে। সবমিলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’ জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহণসহ নতুন কিছু সংযোজন করতে এক হাজার ২৯৯ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা প্রয়োজন। ওই টাকার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্দর থেকে সাত একর জমি অধিগ্রহণসহ নানা কাজে ওই এলাকায় ব্যয় বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। পিডিপিকে পোল সরানোসহ বিদ্যুতের কাজের জন্য আরও ২০০ কোটি টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। নতুন করে ১২টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হচ্ছে। টাইগারপাস থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার রেললাইনের ওপর পিলার বসানো ছাড়াই কাজ হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, বন্দর এলাকায় যাতে যানবাহন চলাচলে শব্দ না হয়, সেজন্য শব্দ প্রতিরোধক বেষ্টনী নির্মাণ করতে হবে। সিএমপি চিঠি দিয়ে বলেছে, ১৬ কিলোমিটার প্রকল্পে যাতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে জি-১ এবং জি-২ সড়কে ডানমুখী চলাচলের লেন রাখা হয়নি। এতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। এটি সমাধান করা জরুরি। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ টানেলের সংযোগের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। এগুলো সংযোজন করতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আপত্তির কারণে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। কাজ বেড়েছে, সময় বাড়ছে। এসব কারণে এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি আমরা। এখনও মন্ত্রণালয় অর্থ দেয়নি। তবে সময় বাড়িয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর। এই সময়ে কাজ শেষ হবে বলে মনে হয়না।’ তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এদক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ না হলে যানজট বাড়বে। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে পতেঙ্গা থেকে নিমতলী পর্যন্ত আট কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। প্রকল্পের জন্য যেখানে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, নকশায় পরিবর্তন ও সংযোজন করতে হবে সেসব স্থানে আপাতত কাজ বন্ধ থাকবে।’
×