ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অকাল বন্যা

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২১ মে ২০২২

অকাল বন্যা

নদীমাতৃক বাংলাদেশের শস্য, শ্যামল, সুষম প্রকৃতি। রুদ্রমূর্তি ধারণ করতেও সময় লাগে না। অনাবৃষ্টি, অতিবর্ষণের কবলে পড়া দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল নৈসর্গের রুষ্ট রূপেও হরেক রকম বিপর্যয়কে মোকাবেলা করে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ওখানকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পরে। সিলেটে অকাল বন্যার সঙ্গে নদীর পানি বিপদসীমার উর্ধে ওঠায় স্থানীয় মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা দেয়া হচ্ছে গত আঠারো বছরে এমন ব্যাপক আকারে বন্যা দেখা যায়নি। প্রবল বৃষ্টিপাতে নগরীর অনেক এলাকা ডুবে গেছে। ভারতের মেঘালয়ে অবিরাম বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলে এই অঞ্চলের নদীর পানি বেড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলেও সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় অকাল বন্যার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি নগরীতে প্রবেশ করেছে। প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র কালিঘাটের শত শত দোকান ও গুদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। কালিঘাটের আড়ত ও গুদামে থাকা চাল এবং নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য নিয়ে বিপদে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সার্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়িঘর, দোকান পানির নিচে। সাব স্টেশনে পানি ওঠায় বিদ্যুত সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ভারি বর্ষণ নয়, কালবৈশাখীর দাপট এখনও নগরীকে তছনছ করে দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আষাঢ়, শ্রাবণের আগেই অকাল বর্ষণে সৃষ্ট পরিস্থিতি জনজীবনকেও করেছে বিপন্ন। আকস্মিক বন্যা এবং ভারি বর্ষণের অবিশ্রান্ত ধারায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা। গ্রামের রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থায় এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বিশুদ্ধ সুপেয় পানির অভাব তীব্রতর হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে বিভিন্ন সরকারী অফিসও প্লাবিত। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের অফিসেও পানি ঢুকে গেছে। সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। নতুন নতুন জায়গা পানিতে ভেসে গিয়ে স্থানীয়দের বেসামাল করে তুলছে। নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেক প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছে। সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে নদীর পানি উপচে পড়তে কোন বেগই পাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। নদীগুলো পুনরায় খনন করা পরিস্থিতির ন্যায্য দাবি। শুধু তাই নয়, বর্ষার মৌসুম আসার আগেই খনন কাজ সমাপ্ত করাও অনিবার্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তীর্থভূমি সিলেট এখন প্রকৃতির রুদ্ররোষে প্রায় নাকাল অবস্থা। তাৎক্ষণিক এবং প্রাসঙ্গিক প্রকল্প হাতে নেয়াও পরিস্থিতির অপরিহার্য দাবি।
×