ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তম উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২১ মে ২০২২

উত্তম উদ্যোগ

তেল নিয়ে তেলেসমাতি কান্ডতে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের সামনে শুধু আশার বাণী উপস্থাপন নয়, বাস্তব উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ঈদের মতো প্রধান উৎসবের আগে বাজার থেকে সয়াবিন উধাও হয়ে যাওয়া এবং ঈদের পর একে একে একাধিক পণ্যের দামের উর্ধগতি মানুষকে বিপর্যস্ত করে চলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তিনি যতই বলুন না কেন ব্যবসায়ীরা কথা রাখেনি, লোকে তাতে বিশ্বাস করেনি। বরং মানুষের প্রশ্ন হলো অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে কেন ব্যর্থতা এলো! পরবর্তীকালে ‘সয়াবিন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’- এমন কথাও বলেছেন মন্ত্রী। ক্ষতিকর হলে অবশ্যই জনস্বার্থে সেই কথাটি প্রচার করা দরকার। দেশে যখন সয়াবিন নিয়ে নয়ছয় চলছে, দাম বাড়ানোর পরও পর্যাপ্ত যোগান মিলছে না, তখন এমন বক্তব্য আত্মপক্ষ সমর্থনের মতোই শোনায়। ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য কেন তাহলে দেশে আমদানি করা হবে? যাহোক, শেষ পর্যন্ত রাইস ব্র্যান অয়েল বা ধানের কুঁড়ার তেল এবং সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়ানোর কথা শোনা গেল। জরুরীভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেয়া হলে অবশ্যই সেটি হবে উত্তম উদ্যোগ। পাবনার ঈশ্বরদীতে এক দশক আগে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে তারা নীতি-সহায়তা পেলে উৎপাদনে আরও গতি আসত। আমদানি করা তেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হতো। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা না থাকায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে ২০ হাজার টন ক্রুড রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়েছে। অথচ ভারত, চীনসহ বেশ কিছু দেশে রাইস ব্র্যান অয়েল বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এই তেল ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থাও নেয়া যেতে পারে। ব্যবহার করার পরেই না ভোক্তারা বুঝবেন তেলটি ভাল নাকি খারাপ। এ তেলের পুষ্টিগুণ সয়াবিন ও পামের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করা এবং এর উৎপাদন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আর সরিষার তেল তো আমাদের গ্রামবাংলারই তেল। তিন দশক আগেও গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় সরিষার তেল ভাঙ্গানোর বা ঘানির ব্যবস্থা ছিল। শহুরে হোটেল রেস্তোরাঁকেন্দ্রিক বিদেশী নতুন সব খাবারের ব্যাপক প্রচলনের আগে ঘরের গৃহিণীরা দেশী পদের যেসব খাবার রান্না করতেন সরিষার তেল দিয়ে, সেসব কি সুস্বাদু মুখরোচক ছিল না? মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপন্ন হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একে সাত লাখে উন্নীত করতে বেশ কিছুটা সময় তো লাগবেই। তত দিন মানুষের চাহিদা পূরণে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সরিষার তেল উৎপাদনের জন্য আরও বেশি করে সরিষার চাষ এবং ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনের কাজটি আসন্ন মৌসুম থেকেই শুরু করা চাই। আমাদের অবশ্যই আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। দেশীয় উৎপাদনের ওপরেই জোর দিতে হবে।
×