ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২০ মে ২০২২

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে রাজধানী ঢাকায়। এতে ভ্যাপসা গরম কমে যাওয়ায় নগরবাসী ছিলেন বেশ প্রশান্তিতে! টানা কয়েকদিনের গরমে যারা রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না তারাও স্বস্তির বৃষ্টি বেশ উপভোগ করেছেন। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও বৃষ্টি নামার খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টির নামার পর ঠা-া বাতাস বইছে ঢাকায়। এতে গরমের ভাবটা কেটে যায়। শুধু তাই নয়, রাস্তাঘাটে ধুলো-বালিও কমে গেছে বৃষ্টির কারণে। তবে রাতের বৃষ্টিতে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে নাইট শিফটের গণমাধ্যম কর্মী ও অন্যান্য পেশার মানুষ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেকে ঘরে ফিরেছেন। উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকায় কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় ভ্যাপসা গরম পড়েছে। পরিষ্কার আকাশে সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সূর্যের তেজও বাড়ছে। অসহনীয় গরমের সঙ্গে যানজটের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসী। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ভোগান্তি আরও বেশি। চরম দুর্ভোগে পড়ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামীরা। গরমের সঙ্গে পথের ক্লান্তিতে তাদের জীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। গত কয়েকদিনে দেশের কয়েকটি স্থানে কালবৈশাখী এবং হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমেনি। উল্টো বেড়েছে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে রাজধানীর পথে পথে মানুষের নাভিশ্বাস দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর মিরপুর থেকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় গেছেন আবুল কালাম। মতিঝিল আসতে তাকে পথে কাটাতে হয়েছে প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি। রাজধানীর বিজয় সরণি, মিরপুর-নিউমার্কেট রোড, ফার্মগেটসহ নানা জায়গায় তাকে যানজটে পড়তে হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মহাখালী থেকে সাতরাস্তা হয়ে মগবাজার-মৌচাক সড়কে ছিল তীব্র যানজট। গাড়ি চলেই না। তীব্র রোদে ও গরমে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। রূবাইয়াত হোসেন নামের একজন জানান, পল্টন থেকে শাহবাগ হয়ে নিউমার্কেটের সড়কে গাড়ির চাপ আছে। প্রতিটি সিগন্যালে বেশ খানিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে। লোকাল বাসগুলোতে পথে পথে যাত্রী ওঠানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বনানীর সড়কের দুদিকেই গাড়ির দীর্ঘ সারি। রাজধানীর মহাখালী-গুলশান-বাড্ডা সড়কেও গাড়ির চাপ আছে। তবে ট্রাফিক সিগন্যালের বাইরে সড়কের কোথাও যানজট নেই। রুমানা ইসলাম আঁখি নামের একযাত্রী বলেন, বাসের ভেতর নিম্ন মানের ফ্যানের বাতাসেও মিলছে না স্বস্তি। তার ওপর বেশিরভাগ বাসেই চারটা ফ্যানের দুই-একটা নষ্ট হয়ে বন্ধ থাকে। সচল ফ্যানগুলোর বেশিরভাগই এক পাশ হয়ে থাকে। যেন জোড়াতালি দিয়ে বাস যাত্রীদের গরম দূর করার চেষ্টা। গরমে ভোগান্তি মেনে নিয়েই যাতায়াত করছেন তারা। গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেয়া শিকড় পরিবহনের যাত্রী আলিফ হোসেন বলেন, বাসে পেছনের ফ্যান নষ্ট ছিল, তাই সামনে এসে বসেছি। তবে ফ্যানের বাতাসও গরম। চালকের পাশে বসা আরেক যাত্রী বাদশা আলম বলেন, টাকা দিয়ে বাসে চড়ি। একটু আরামদায়ক ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়। আমার মাথার ওপর ফ্যান নেই, জানালাই ভরসা। কী ধরনের ভাল ব্যবস্থা চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমে পানি লাগে বেশি। বাসগুলাতে পানি নেই। ফ্যান আছে, কিন্তু তাতে জোর নেই। ভাল মানের ফ্যান লাগালে যাত্রীদের কিছুটা সুবিধা হবে। আলিফ বাসের আরেক যাত্রী নাজমুল ইসলাম বলেন, ফ্যান নষ্ট থাকলে কী আর করার। এভাবেই যেতে হবে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবর্তন হলে ভাল হয়। না হলে কাউকে কিছু বলার নেই। কেউ তো শোনে না। তবে গরমের কারণে নতুন করে ফ্যান ঠিক করা হয়েছে বলে জানান বাহন পরিবহনের সহকারী রাজিব। তিনি বলেন, বাসের ফ্যান নষ্ট থাকে এটা সত্য। কিন্তু প্রত্যেক বছরই গরম এলে কিছু নতুন ফ্যান লাগানো হয়। নষ্ট ফ্যানগুলো ঠিক করা হয়। ফ্যানগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় জানিয়ে সহকারী নাইম বলেন, ৮শ’-৯শ’ টাকার ফ্যান বেশি দিন টেকে না। তার ছিঁড়ে যায়, গরমে গলে যায়। তাছাড়া যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকায় তাদের মাথায় লেগে ফ্যান ঘোরার অংশ নষ্ট হয়ে যায়, তাই ফ্যান ঘোরে না। চালক আসনের ফ্যান বন্ধ করে বসে থাকা শিকড় পরিবহনের চালক বিপ্লব বলেন, ফ্যান চালাই না। ফ্যানের বাতাস গরম। এতে মাথা গরম হয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৭ দশমিক ২, তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও বাগেরহাট জেলাগুলো ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় তাপমাত্রা কম থাকলেও গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। আরও ১৫ বা ২০ দিনের মতো এই ভ্যাপসা গরম থাকতে পারে। যদিও মাঝে কালবৈশাখী বা হালকা বৃষ্টি হবে কোথাও কোথাও। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তিন কারণে এইরকম গরম অনুভূত হচ্ছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি, বাতাসের গতিবেগ কম, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কম থাকা এবং দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলো মাটিতে পড়ার কারণে গরম যতটা না তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে।
×