ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

রফতানিবান্ধব অর্থনীতি

প্রকাশিত: ২১:০০, ২০ মে ২০২২

রফতানিবান্ধব অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বেশ ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি খাত। তাতে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। নতুন রেকর্ড হচ্ছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দুই মাস বাকি থাকতেই পণ্য রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জুলাই-এপ্রিল এই ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। দেশীয় মুদ্রায় যা ৩ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার সমান। দেশের ইতিহাসে এই পরিমাণ পণ্য রফতানি আগে কখনও হয়নি। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ। এখনও চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাকি। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পণ্য রফতানি হবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্য রফতানি পাঁচ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বছর শেষে। এর আগে এক বছরে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। করোনা স্থবিরতার পাশাপাশি বিশ্ব অস্থিরতার মাঝেও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসেই অর্জন হয়েছে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা, যা প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের দশম মাস এপ্রিলে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ (৪.৭৪ বিলিয়ন) ডলার বিদেশী মুদ্রা এনেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি রফতানি আয় দেশে এসেছে। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর রফতানিবান্ধব নীতি, প্রণোদনা প্যাকেজ এবং রফতানি বৈচিত্র্যের তাগিদের সুফল আসতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিতে। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক খাতের রফতানির পাশাপাশি অন্য তিনটি খাতেও রফতানি ১ কোটি ডলারের ঘরে পৌঁছে গেছে। রফতানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ স্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক। চা, শাকসবজি, ফলমূল, মসলাসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি প্রথমবারের মতো শতকোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০৪ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেশ কয়েক বছর পর ১ শত কোটি ডলারের ঘরে ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি ১ কোটি ডলারের ঘরে ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। হোম টেক্সটাইল রফতানি গত অর্থবছর ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছায়। গত ১০ মাসেই ১৩৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রফতানি হয়েছে। হোম টেক্সটাইল রফতানি গত অর্থবছর ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছায়। ১০ মাসেই ১৩৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রফতানি হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পণ্য রফতানি চলতি অর্থবছর জুন মাস শেষে ৫ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগে এক বছরে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। করোনা মহামারী মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে, এর কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের, আর দেশের আলোকবর্তিকা দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনাকারী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। পোশাক শিল্প রফতানিতে মাইলফলক, সামর্থ্যরে অধিক চাহিদা থাকায় একাধিক দেশের অর্ডার নিতে পারছে না বাংলাদেশ। চীন ও তাইওয়ানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন দেশের অর্ডার বেড়েছে বাংলাদেশে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে বিদেশী পোশাক শিল্পের ক্রেতারা ঝুঁকেছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুব্যবস্থাপনা ও বিশেষ প্রণোদনায় গার্মেন্টস শিল্প ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অগ্রগতি। অতিমারী করোনায় বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশ যখন কুপোকাত, তখন করোনা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ায়, সার্বিক রফতানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই পুরো অর্থবছরের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। ফলে অর্থবছর শেষে পণ্য রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারে বলে আশা করছেন রফতানিকারক ও ইপিবির কর্মকর্তারা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চলতি অর্থবছর পণ্য রফতানি ৭ বিলিয়ন ডলার বাড়ার আশা তাদের। আগামী মাসগুলোতেও তৈরি পোশাক রফতানির এমন ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। সরকার আরএমজি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঠিক করলেও তা ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। এখন পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি হয়েছে ৯৭ কোটি ডলার। এখন পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি হয়েছে ৯৭ কোটি ডলার। সবকিছু ঠিক থাকলে পণ্য রফতানি চলতি অর্থবছরের জুন মাস শেষে ৫ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগে এক বছরে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। রফতানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ স্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। ১০ মাসে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পণ্য রফতানি চলতি অর্থবছর জুন মাস শেষে ৫ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগে এক বছরে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। করোনা মহামারী মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে, এর কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের, আর দেশের আলোকবর্তিকা দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনাকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের রফতানি আয় ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের রফতানি আয়ের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৯৩.৮% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্বের মোট ২০১টি দেশে ৭৩০টি পণ্য রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। রফতানি বৃদ্ধিতে নগদ সহায়তা প্রদানের আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮টি রফতানি পণ্যে ২% থেকে ২০% পর্যন্ত নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। রফতানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন পণ্য সংযোজনের লক্ষ্যে ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি সম্প্রসারণের জন্য ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীগণকে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর একটি সম্ভাবনাময় পণ্যকে বর্ষপণ্য (চৎড়ফঁপঃ ড়ভ ঞযব ণবধৎ) ঘোষণা করা হয়। রফতানি বাণিজ্য উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সিআইপি (রফতানি) নির্বাচন ও জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান, রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সিআইপি (রফতানি) নির্বাচন এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে (২০১৭ সালের জন্য) ১৮২ ব্যক্তিকে সিআইপি (রফতানি) কার্ড প্রদান করা হয়। একইভাবে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৬৭টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হয়। হালনাগাদ সিআইপি (রফতানি) নির্বাচন এবং জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে; রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক উইং এর সংখ্যা ২৩টিতে উন্নীত করা হয়েছে, রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশল বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানসহ রিপোর্টিং ফরম্যাট হালনাগাদ করা হয়েছে। রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১০১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় সম্ভাবনাময় পণ্যের মানোন্নয়ন এবং কারিগরি উৎকর্ষ সাধনসহ গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৪টি ঞবপযহড়ষড়মু ঈবহঃবৎ নির্মাণের ভৌত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লাস্টিক সেক্টরের উৎপাদিত পণ্য রফতানি বাজারে প্রবেশের জন্য বিদ্যমান শর্তাবলি প্রতিপালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পণ্য রফতানিতে সুবাতাস অব্যাহত আছে। রফতানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
×