ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ২১:০০, ২০ মে ২০২২

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন

ভিক্ষাবৃত্তির মতো নেতিবাচক পেশা সমাজ সংসারে কোনভাবেই গৃহীত হয় না। আধুনিক শিল্পোন্নত সভ্যতায় তো তা একপ্রকার বর্জনীয়ই বলা চলে। বর্তমান সরকার নিম্নমানের এই পেশা দূরীকরণে ২০০৯ সাল থেকেই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করলেও তা এখন অবধি সম্পূর্ণ নিরসন করা সম্ভব হয়নি। তবে রাস্তাঘাটে পারিবারিক আঙ্গিনায় ভিক্ষুকদের ঘোরাফেরা আগের চেয়ে অনেক কমে যাওয়ার চিত্রও স্বস্তিদায়ক। তবে নির্মূল না হওয়াও বিসদৃশ বৈকি। সরকারী পদক্ষেপ ভ-ুল হওয়ার পেছনে একটি চক্র সর্বদা তৎপর বলেও জানা যায়। সমস্যা আরও গভীরে। এখন অবধি সারাদেশে ভিক্ষুকদের সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, দেশে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখের মতো ভিক্ষুক থাকতে পারে। মাঝে মধ্যে দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে পুনর্বাসনের চেষ্টাও চলতে থাকে। স্থান সঙ্কুলানের অভাবে তাদের ছেড়েও দিতে হয়। এর ওপর আছে সমাজসেবা অধিদফতরে লোকবলের সঙ্কট। সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের আগস্ট থেকে এই পেশায় নিয়োজিতদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচী শুরু করা হলেও তা সম্প্রসারিত হতে হরেক রকম সমস্যা পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে দেয়। তবে বর্তমান সরকার এই সামাজিক অপবৃত্তিকে সমূলে উৎপাটন করতে বদ্ধপরিকর। সরকারের কর্মসূচীর কারণেই হয়ত রাস্তাঘাটে কিংবা গৃহের দরজায় বর্তমানে ভিক্ষুক কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে দূরীভূত করতে সরকার প্রথমবারের মতো ২০১৭-১৮ সালের অর্থবছরে ৫৮টি জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রণয়নে নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়। গত ২০২০-২১ সালের অর্থবছরে এই খাতে সরকারী বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা করা হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখযোগ্য। তৃতীয় লিঙ্গের একটি বিশেষ অংশও রাস্তায়, মানুষের দরজায় ভিক্ষাবৃত্তি অথবা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে। তবে সরকারের হরেক রকম কর্মপ্রকল্পের বাস্তবায়নের নিরিখে এসব গোষ্ঠীর সংখ্যাও এখন কমতির দিকে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গের ভবঘুরে জনগোষ্ঠীকে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এনে তাদের যে নিরাপত্তার বিধান করেছে, সেখানেই তারা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে এসেছে। আবার রাস্তা ঘাটে, পার্কে, খোলা জায়গায় টোকাই আর পথশিশুদের নিত্য চলাফেরাও সুস্থ স্বাভাবিক পরিস্থিতির বিপরীত চিত্র। তাদেরও সুস্থির, নিরাপদ বলয়ে নিয়ে এসে জীবনমানকে নতুনমাত্রা দেয়াও জরুরী। বাংলাদেশ উন্নয়নের অভিযাত্রায় যেভাবে ছুটে চলেছে, সেখানে অনিয়ন্ত্রিত, দৃষ্টিকটু কিংবা সামাজিক ব্যাধির মতো দুঃসহ পরিস্থিতি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। সমস্যা যতই গভীরে থাকুক সুষ্ঠু, সমন্বিত ও জনবান্ধব উদ্যোগ সততার সঙ্গে প্রয়োগ করতে পারলে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিও আয়ত্তে এসে যায়। যারা এই অসহনীয় পেশার সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যেও থাকতে হবে সচেতন দায়বদ্ধতা, বিরূপ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার সদিচ্ছা আর স্বতঃস্ফূর্ত কর্মপরিকল্পনা। সব ধরনের অভিশাপ আর জঞ্জাল থেকে মুক্ত হতে গেলে নিজেকেই সবার আগে সামনে এসে দাঁড়াতে হবে। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিই সবাইকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
×