ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চরম অস্তিত্ব সঙ্কটে রাখাইনরা

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১৯ মে ২০২২

চরম অস্তিত্ব সঙ্কটে রাখাইনরা

নিজস্ব সংবাদদাতা,কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ অধিকাংশ মানুষ চইয়াপাড়া নামেই চেনেন বাসস্ট্যান্ডসহ আশপাশের গোটা এলাকা। অনেকে আবার নাচনাপাড়া চৌরাস্তাও বলেন। ওখানকার রাখাইন পল্লীর নামকে ঘিরেই এ নামকরণ। ওই রাখাইন পল্লীর প্রয়াতদের সৎকার করা হয়েছে আরপাঙ্গাশিয়া নদীর তীরের জমিতে। নির্দিষ্ট ওই জায়গায় শ্মশানের অবস্থান দৃশ্যমান। কিন্তু রাখাইনদের শ্মশানের ওই জায়গা জনপ্রনিধিসহ প্রভাবশালীমহল আশপাশ দখল করে টিনশেড এবং সেমিপাকা স্থাপনা তুলেছে । শ্মশানের চারদিক এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে, কোন রাখাইন ব্যক্তি মারা গেলে তার মরদেহ শ্মশানে নেয়ার মতো পথ পর্যন্ত নেই। বর্তমানে দখল ঠেকাতে রাখাইন জনগোষ্ঠী উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। আলীপুর মৎস্য বন্দরের রাখাইন পল্লীর শ্মশানের জায়গা দখল করে আরও একযুগ আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তোলা হয়েছে। এভাবে রাখাইন পল্লীর জমিজমা থেকে শুরু করে শ্মশান পর্যন্ত দখল দৌরাত্ম্য কোন কিছুতেই থামছে না। কুয়াকাটায় কেরানিপাড়া রাখাইন পল্লীর ভিন্ন বৈশিষ্ট ধারণ করে তোলা বসতঘর পাল্টে আবাসিক হোটেল করা হয়েছে। পল্লী এলাকায় তোলা হয়েছে বহুতল স্থাপনা। সেখানকার রাখাইন নারী লুমো জানান, কোন নিয়ম কানুনের বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে তাঁদের জমিজমা, শ্মশান, বাড়ি ঘর দখল করা হচ্ছে। রাখাইন পাড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি পর্যন্ত দখল করে নেয়া হয়েছে মম্বীপাড়া, হুইচ্যানপাড়া, মিশ্রিপাড়ার রাখাইনরা এমন অভিযোগ করেছেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু রাখাইন উত্তম জানান, কলাপাড়া, খেপুপাড়া, মিশ্রীপাড়া, কুয়াকাটাসহ অধিকাংশ গ্রামের নাম রাখাইন মাদবরের নাম অনুসারে করা হয়েছে। বর্তমানে রাখাইনদের জমজমা থেকে শুরু করে শ্মশান, পাড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের পরে এখন গ্রামের নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে। যেমন চইয়াপাড়াকে উলামানগর, ডঙ্কুপাড়াকে রসুলপুর, হুইচ্যান পাড়াকে হোসেন পাড়া করা হয়েছে। এভাবে সাগরপাড়ের আদিবাসী রাখাইনদের জমিজমা থেকে শুরু করে তাদের নামনিশানা মুছে ফেলতে পরিকল্পিত ভাবে ভূমিখেকোদের একটি মহল অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। রাখাইনদের জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বরিশাল অঞ্চল এর সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মংম্যা জানান, কলাপাড়ার আদিবাসী রাখাইনদের জমিজমা থেকে শুরু করে শ্মশান পর্যন্ত দখল করা হয়েছে। এক সময়ের পর্যাপ্ত জমির মালিকরা এখন নিঃস্ব। দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র হয়ে গেছে। রাখাইনদের রক্ষায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দখল সন্ত্রাসীদের আাইনের আওতায় আনার দাবি জানান। রাখাইন মংম্যা আরও জানান, বর্তমানে কলাপাড়ায় ২৬টি রাখাইন পল্লী রয়েছে। পরিবার সংখ্যা ৩১৮ জন এবং জনসংখ্যা ১১৭৪ জন। অথচ কলাপাড়ায় একসময় ২২৭টি রাখাইন পল্লী ছিল। জনসংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, রাখাইনদের জমিজমা থেকে শুরু করে যে কোন সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। এছাড়া দরিদ্র রাখাইন পরিবার কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এমনকি রাখাইনদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে সরকারীভাবে সহায়তা করা হয়। তাদের জীবন মানের উন্নয়ন করতে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া রাখাইনদের শিক্ষা, সংস্কৃতি পালনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল ধরনের সহায়তা করা হয়।
×