ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাস্কফোর্স কমিটির সভা আজ

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজছে সরকার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৮ মে ২০২২

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজছে সরকার

এম শাহজাহান ॥ সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকৗশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হতে পারে। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চাল, আটা, ডাল পেঁয়াজ, চিনি ও ময়দার মতো পণ্যের দাম কমিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার উপায় খুঁজছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম এখন নিম্নমুখী। নতুন করে মালয়েশিয়ার শুল্ক কমিয়ে পামওয়েল রফতানির ঘোষণায় ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বাজার ধরে রাখতে শীঘ্রই পামওয়েল রফতানি করবে বলে আভাস দিয়েছে। এতে করে দেশেও ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির আজ বুধবারের দ্বিতীয় সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়া আটা ও ময়দার উৎপাদন বাড়াতে গমের বিকল্প উৎস খোঁজা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও গম আমদানি করা হবে। জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশও সঙ্কট থেকে মুক্ত নয়। এ কারণে আমদানিকৃত বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম এখন চড়া। সর্বশেষ ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার কারণে আমদানিতে নতুন ঋণপত্র খোলা নিয়ে কিছুটা চাপের মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের ওপর চাপ কমাতে সব ধরনের বিলাসী পণ্য আমদানি নিরৎসাহিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারী-কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিরৎসাহিত করে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। এর মূল কারণ ব্যয় সঙ্কোচন করে ডলারের চাহিদা কমিয়ে আনা। তবে জরুরী খাদ্যপণ্য আমদানি উৎসাহিত করবে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটেও কি কৌশল গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটির মতামত চাইবে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে আজকের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর এবং অধিদফতরের টাস্কফোর্সের সদস্য উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তা এবং ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভাটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন অন্যান্য পণ্যের দিকে নজর রাখছে সরকার। ভোক্তা স্বার্থে চাল, ডাল, আটা, চিনি এবং মসলাপাতিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমানো হবে। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে টাস্কফোর্স কমিটির মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশেও কয়েকদফা ভোজ্যতেলের মূল্য সমন্বয় করে বাড়ানো হয়েছে। ঠিক তেমনি বহির্বিশ্বে দাম কমলেও দেশে তা সমন্বয় করে কমিয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। আশা করছি, টাস্কফোর্স কমিটির সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আটা ও ময়দার দাম বেশি। বর্তমান প্রতিকেজি খোলা আটা ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্র্যান্ডভেদে দুইকেজি প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। ময়দার দাম আরও বেশি। প্রতিকেজি ময়দা ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ অবস্থায় ভারতের গম রফতানি বন্ধের খবরে আরও চড়তে পারে আটার বাজার। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই দুইদেশ থেকে গম আমদানি প্রায় বন্ধ রয়েছে। অথচ গমের প্রধান উৎস রাশিয়া-ইউক্রেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের গম রফতানি বন্ধের খবরে আটা ও ময়দার বাজার অস্থির হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভারত সব সময় বাংলাদেশে গম রফতানি অব্যাহত রাখতে চায় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। এরপরই দেশের বাজারে একদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়ে ১০-১৫ টাকা। এ অবস্থায় ফের আমদানির সুযোগ দেয়া হতে পারে এ ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়লে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কারসাজি করার তেমন সুযোগ পায়নি। ফলে দাম বাড়ার দুদিন পরই আবার কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে এখন মানভেদে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আবার অস্থির হতে পারে পেঁয়াজের বাজার। এ ধরনের সঙ্কট তৈরি হলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া আগামী বাজেটে ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কি কৌশল থাকা প্রয়োজন সে বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটির মতামত চাওয়া হবে। জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে একাধিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ইতোমধ্যে রমজান মাসে মজুদ নিয়ন্ত্রণসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্স তুলে নেয়া হয়। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে প্রশাসনিক পর্যায়ে শুরু হয়েছে নানামুখী তৎপরতা। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার সরকারী সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। টিসিবির মাধ্যমে রোজার আগে ও মাঝে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। কোরবানি ঈদের আগে টিসিবির এই কার্যক্রম সারাদেশে ফের শুরু করা হবে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই অপকর্ম রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি। ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদের বড় বড় ভা-ার ধরা পড়ছে অভিযানের মুখে। এ পরিস্থিতি বাজারে দ্রুত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ রয়েছে প্রশাসনের।
×