ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেজর চাকলাদার (অব)

কোভিড-১৯ ক্রীড়াঙ্গনের ‘রাক্ষস’

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৮ মে ২০২২

কোভিড-১৯ ক্রীড়াঙ্গনের ‘রাক্ষস’

আবার এশিয়ান গেমস নাই হয়ে গেল। চলতি বছরের ১০ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর চীনের হাংঝুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবারের আসরের। সব প্রস্তুতি শেষ করার পর করোনা মহামারীর কারণে থেমে যেতে হলো আয়োজকদের। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এশিয়ান গেমসের সব প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছে ফেডারেশনগুলোকে। বাংলাদেশ ৪২টি ইভেন্টের মধ্যে ১৮ টিতে অংশ নিতে প্রশিক্ষণে ছিল। ১৯৮৬ সালের সিউলে এশিয়ান গেমসের বক্সিংয়ে মোশাররফ হোসেন ব্রোঞ্জ জয় করেছিলেন। ২০১০ সালে ক্রিকেটে গুয়াংঝুতে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেট অলিম্পিকে ১৯০০ সালে আর কমনওয়েলথ গেমসে ১৯৯৮ সালে , এ দুবার মাত্র অন্তর্ভুক্ত হয়ে ছিল। আজ পর্যন্ত এশিয়ান গেমস থেকে আমাদের অর্জন হচ্ছে, স্বর্ণপদক একটি (ক্রিকেট) সিলভার পাঁচটি (কাবাডি-৩ আর ক্রিকেট-২), ব্রোঞ্জ ৬টি (কাবাডি-৪, ক্রিকেট- ১, বক্সিং- ১)। এবার যদি গেমস অনুষ্ঠিত হতো তাহলে আর্চারিতে মেডেল পাবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। হকিতে আমরা ভাল করব আমাদের মধ্যেই। মানে ব্যাংককে এশিয়ান গেমস কোয়ালিফাইং যাদের সঙ্গে খেলেছি। এশিয়ান গেমসের হকিতে কোভিডের মতনই ওত পেতে আছে পাকিস্তান, ভারত, কোরিয়া- তারপর চীন, জাপান ও অনেক দেশ। আমরা ১৯৮৫ সালে এই জাপান আর চীনকে হারিয়েছিলাম। আর আজ ওরা কোথায় উঠে গেছে আর আমরা এখনও পরিকল্পনা আর ‘দেখ লাংগা’ আস্ফালনেই দিন পার করছি। ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের গর্ব ক্রিকেট, সেই ক্রিকেটের আভিযাত্য হলো টেস্ট। টেস্ট খেলতে অনেক ক্রিকেটারের অনীহা। পাপন সাহেব গোস্বা করেছেন। তবে আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের অনেক টাকা। এত টাকা যে তারা স্টেট ব্যাংকেরেও ধার দিতে পারে। তাই পাপন সাহেবের গোস্বা তারা থোড়াই কেয়ার করে, দয়া হলে টেস্ট খেলতেও পারে। এতে মনে হচ্ছে সম্ভাবনার ক্রিকেট কেন যেন সর্বত্রই কেমন এক আলুথালু অবস্থা। ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জাতীয় পুরস্কার দেয়া হলো। স্বীকৃতি-এ স্বীকৃতি জীবন রঙিনভাবে উপলব্ধি করতে উদ্দীপনা যোগায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শতভাগ ক্রীড়া প্রেমিক ...আবারও প্রমাণিত। ক্রীড়াপ্রেমী মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল স্যালুট পেতেই পারেন। ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে দাবি থাকবে ক্রীড়া পরিবেশ অটুট রাখতে নূতন সব স্টেডিয়ামে দোকান না রাখার জন্য। ভাল কাজও সম্পূর্ণ নিখুঁত হয় না, হকিতে কর্নেল ফেরদৌস, আনভির আদেল, কাঞ্চনের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া উচিত ছিল। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার জয়ী ৮৫ জন, যারা ক্রীড়াঙ্গনের শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদেরকে স্যালুট। সময়কে উপেক্ষা করে চলা মুশকিল। এ মুহূর্তের ‘বার্নিং ইস্যু’ নিয়ে কথা বলাই যায়। বরিস বেকার আমার পছন্দের টেনিস তারকা। ব্যাংক প্রতারণার দায়ে আড়াই বছর সশ্রম কারাদ- এখন ভোগ করছেন তিনি। খেলা ছাড়ার পর নোভাক জোকোভিচের কোচও ছিলেন। সেদিন তার গার্লফ্রেন্ড দেখা করতে গিয়ে দুঃখ করে বলেন যে, কারা কর্তৃপক্ষ তার সোনালি রঙের চুল পাল্টে অন্যান্য কয়েদির চুলের মতো করতে বলেছে। আইন কতই না কঠোর। এশিয়ান গেমস না হওয়াতে আমরা সময় পেলাম, এখন এ সময়টা ক্রীড়ামহলকে গুছাতে সময় ব্যয় করা দরকার। আমরা ব্যর্থ হই, কারণ আমাদের কোন দীর্ঘ পরিকল্পনা নেই। আমরা সেই গ্রাম্য কথা ‘উঠ ছেমরি তোর বিয়া’ মানে তড়িঘড়িতে বিশ্বাসী। প্রশিক্ষণ সব সময়ই মধ্যম মানের, মানসিক প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। যার জন্য শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষমতা থাকার পরও প্রয়াগে ব্যর্থ এবং এক ক্রিকেট বাদে সব দলই অর্থনৈতিক দুরাবস্থার শিকার বর্তমানে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ, আর কতকাল শুধু অংশগ্রহণ করে কিছু কর্মকর্তার দেশ ঘুরার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করব। কঠোর না হলে এ ক্রীড়াঙ্গন থেকে সফলতার আশা করা বৃথা। এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে সব আজগুবি ধ্যান-ধারণার। বিশ্বে কোথাও দোকানসহ স্টেডিয়াম নেই, আমাদের আছে। তবে দুঃখের কথা বিশ্বের কোন দেশ এই মহান দৃষ্টান্ত গ্রহণ করে নেই। ক্রীড়াঙ্গনকে মানসম্পন্ন করতে ফেডারেশনগুলো একাডেমি তৈরি করে শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ চালু করতে পারে। আর এতে সফলতা আসবে ইনশাল্লাহ। লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় এবং সেনাবাহিনী হকি দল
×