ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অঙ্গন সাহা

পিতার স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশিত: ০০:১৫, ১৭ মে ২০২২

পিতার স্বপ্ন পূরণ

২০২১ সালের ৫ এপ্রিল করোনার কাছে হার মানেন সাভার পৌর এলাকার কাতলাপুর মহল্লার বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মোঃ নাসির উদ্দিন। মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে বড় স্বপ্ন নিয়ে একটি ব্যাগ তৈরির কারখানা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ আকস্মিক মৃত্যুতে সব স্বপ্ন যেন তার শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পরবর্তীতে বাবার সেই স্বপ্নকে ধরে রাখতে কারখানার হাল ধরে আদরের মেয়ে রোখসানা আক্তার ইতি। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে একাধীক হ্যান্ডি ক্রাফট কম্পানিতে কাজ করেছেন। কারখানাটি টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে চলেছে এ নারী। শনিবার জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রোখসানা আক্তার ইতি বলেন, দীর্ঘদিন আমার বাবা বিভিন্ন কোম্পানিতে লেদার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি নিজের কারখানা দেয়ার। সেই ইচ্ছা থেকে ২০১৮ সালে সাভারের কাতলাপুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে পাঁচটি মেশিন দিয়ে এমএলবি লেদার ক্রাফট নামে একটি কারখানার যাত্রা শুরু করেন। সে সময় আমাদের অনেক অর্ডার আসত। আমিও বাবার সঙ্গে থেকে তাঁকে সাহায্য করতাম। বাবার কাছ থেকেই আমি ব্যাগ তৈরির যাবতীয় সব কিছু শিখেছি। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বাবা যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেল সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিবারের অন্য সদস্যরা মেশিনগুলো বিক্রি করে কারখানা বন্ধ করে দিতে বলল। কিন্তু আমার মন চাচ্ছিল না, তখন সবাইকে বুঝিয়ে আমি কারখানার হাল ধরি। আগে যারা আমাদের বিভিন্ন ব্যাগের অর্ডার দিত তারা অর্ডার দেয়া বন্ধ করে দিল। তবুও হাল ছাড়নি নিজেই বিভিন্ন কোম্পানির কাছে অর্ডার চাইতে শুরু করি। কিন্তু আমি নারী বলে কেউ আমাকে আর্ডার দিতে চায় না। তারা ভাবেন আমি নারী হয়তো কাজ ঠিকমতো করতে পারব না। ইতি বলেন, এরপরও হাল ছাড়িনি একদিন আমার শিক্ষিকা ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলামের সঙ্গে কারখানার বিষয়ে কথা হয়। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, ম্যাডাম আমাদের একটি ব্যাগ তৈরীর কারখানা রয়েছে। যেখানে জুট, লেদার, ক্যানভাস, কাপড়, মানিব্যাগ, স্কুল ব্যাগসহ সব ধরনের এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ব্যাগ তৈরি করা হয়। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাকে কেউ অর্ডার দিতে চাচ্ছে না। তখন ম্যাডাম আমার কথা শুনে মহিলা পরিষদের কয়েকজন সিনিয়র নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা আমার ব্যাগের নমুনা দেখতে চান। এরপর ব্যাগের নমুনা তাদের পছন্দ হলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সম্মেলন উপলক্ষে এক হাজার ব্যাগের অর্ডার দিলে আমি তা সময়মত তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। রোখসানা আক্তার ইতি বলেন, এখন আমার কারখানাতে অর্ডার নেই তবে বিভিন্ন ব্যাগের নমুনা তৈরি করে সেগুলো নিয়ে মার্কেটিং করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি শত কষ্টেও বাবার স্বপ্নের কারখানা টিকিয়ে রাখাতে, আর সে কারণেই প্রতি মাসে নিজের চাকরির জমানো টাকা দিয়ে কারখানার ভাড়া দিচ্ছি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে আমরাও ভেবেছিলাম এতগুলো ব্যাগ হয়তো ইতি তৈরি করে দিতে পারবে না। পরবর্তীতে সে সময়মতো ব্যাগগুলো আমাদের বানিয়ে দিতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে ব্যাগের গুণগত মান খুবই ভাল ছিল।
×